বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
একই শিল্প শহরের দু’টি কারখানা। বয়সে এক বছরের ছোট-বড়। দুই সংস্থার কর্মী আবাসনের দূরত্ব মেরেকেটে এক কিলোমিটার। কিন্তু প্রাক্ শারদোৎসবের সকালে দূরত্বটা যেন কয়েক যোজন।
এক দিকে, ঝকঝকে পুজোর মণ্ডপে পড়েছে উজ্জ্বল রঙের প্রলেপ। ঝোপঝাড় কেটে আবর্জনা সাফ করা হচ্ছে। অন্য দিকে, মণ্ডপে জল জমে আছে। চুনের পোচ দূর অস্ত্, দেওয়াল জুড়ে মলিনতার ছাপ স্পষ্ট।
একটি ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের আবাসনের পুজো। অন্যটি বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের। প্রথমটি লৌহ ইস্পাত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। দ্বিতীয়টির খ্যাতি রেল ওয়াগন তৈরিতে। প্রথমটি এখন সুয়োরানি, অলঙ্কারে সজ্জিত। দ্বিতীয়টি দুয়োরানি, ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইস্কোর আবাসিকদের মুখে হাসি। তাঁরা জানালেন, এ বার বাজেট বেড়েছে। পুজোর আয়োজনে ত্রুটি রাখব না। চাপা দীর্ঘশ্বাসে বার্ণ স্ট্যান্ডার্ডের আবাসিকেরা জানাচ্ছেন, এ বারও পুজো করছি। জানি না সামনের বছর করতে পারব কি না।
কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে স্বস্তিতে নেই বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের কর্মীরা। কেন্দ্রীয় সরকার কারখানাটিকে যে কোনও সময়ে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে বলে আশঙ্কা কর্মীদের। এ বার আবাসনের পুজো ৭১ বছরে পড়েছে। এ বছরই শেষ ধরে পুজোর প্রস্তুতি চলছে। পুজো কমিটির সদস্য বিনয় মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের ভাগ্য এখন সুতোয় ঝুলছে। কারখানা না বাঁচলে আগামী বছর পুজো হবে না।’’ আবাসিকেরা জানালেন, আগে পুজোয় বড় মেলা বসত। প্রতি দিন বিচিত্রানুষ্ঠান হত। এখন সে দিন গিয়েছে। গঙ্গা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কারখানা সব কিছুর জিয়নকাঠি। এখন কোরামিন দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। বুকের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে। আর কি আনন্দ থাকে!’’ তবুও আশায় বাঁচছেন কর্মীরা। গত মাসেও ১১৭টি ওয়াগন তৈরি হয়েছে। অনেকের আশা, দেবীর আশীর্বাদে যদি সরকারের সিদ্ধান্ত বদল হয়। পুজোর যুগ্ম সম্পাদক অমিয় কবিরাজ বলেন, ‘‘এই বিশ্বাসে এ বারও পুজো করছি।’’
পুজোর আয়োজনে এ বার ভাটার টান রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্লসের কর্মী আবাসনেও। এত দিন সংস্থার অধীনে থাকা লোয়ার কেসিয়া, আপার কেসিয়া, বিটু সেক্টর এক, দুই, তিন এবং ওল্ড কলোনি আবাসনে পুজো হত। এ বার শুধু ওল্ড কলোনিতেই পুজো করছেন বাসিন্দারা। সাহায্য চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আবেদন করেছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষাল জানান, কারখানা বন্ধ। কলোনিতে জল, বিদ্যুতের সংযোগ নেই। প্রায় সবাই কলোনি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘৬৫ বছরের পুরনো কারখানার ঝাঁপ বন্ধ। এ বার কোনওমতে হলেও অচিরেই ৬৩ বছরের পুরনো পুজোও বন্ধ হতে চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy