Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আলুর ধাক্কায় মন্দা সেলের বাজারেও

চৈত্র মাসের অর্ধেক শেষ। কিন্তু এখনও বছর শেষের বাজার জমল না কালনায়। দোকানদাররা রকমারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই। রবিবাসরীয় সন্ধ্যাতে কালনা শহর ও সংলগ্ন কয়েকটি বড় বাজারগুলিতে ঘুরে চোখে পড়ল এমনই ছবি।

রবিবারেও ফাঁকা সেলের বাজার। বর্ধমানের বিসি রোডে উদিত সিংহর তোলা ছবি।

রবিবারেও ফাঁকা সেলের বাজার। বর্ধমানের বিসি রোডে উদিত সিংহর তোলা ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

চৈত্র মাসের অর্ধেক শেষ। কিন্তু এখনও বছর শেষের বাজার জমল না কালনায়। দোকানদাররা রকমারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই। রবিবাসরীয় সন্ধ্যাতে কালনা শহর ও সংলগ্ন কয়েকটি বড় বাজারগুলিতে ঘুরে চোখে পড়ল এমনই ছবি।

চলতি বছরে আলু ও ধান চাষে চাষিদের লাভ হয়নি বললেই চলে। ফসল বিক্রি করতে হয়েছে খুব সামান্য দামে। অনেক ক্ষেত্রে মহাজনের থেকে নেওয়া ধার শোধ হয়নি। অন্য দিকে, ১০০ দিনের প্রকল্পেও কাজ মিলছে না বললেই চলে। সব মিলিয়ে মূলত কৃষি নির্ভর কালনার বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ এখন আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। তার প্রভাব পড়েছে নববর্ষের বাজারে। কোথাও যেন উৎসবের সেই মেজাজটাই উধাও। কালনা, ধাত্রীগ্রাম, মেমারি, সাতগাছিয়ার বাজারগুলিতে এখন চৈত্র সেল চলছে। কিন্তু ভিড় নেই। শুধুমাত্র বড় দোকানগুলিতেই নয়, রাস্তার পাশের পোশাক বিক্রির ছোট ছোট স্টলগুলিতেও একই অবস্থা। দোকারদাররা জানালেন, কালনা শহরের ব্যবসা নির্ভর করছে সংলগ্ন গ্রামগুলির উপর। তাঁদের বেশিরভাগ ক্রেতাই গ্রামের বাসিন্দা। এ বার আলু চাষে তাঁরাই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। শুধু চাষিরাই নয়, আলুর বন্ড কেনা-সহ নানা বিষয়ে অন্যান্য পেশার মানুষও আলু চাষের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত থাকেন। তাই এ বার চৈত্র সেলের বাজারে গ্রামের মানুষের আগ্রহ নেই বললেই চলে।

অন্যান্য বছর কিন্তু ছবিটা থাকে বেশ আলাদা। আলু বিক্রির নগদ টাকা হাতে পাওয়ার পরে চাষি পরিবারের সদস্যরা নতুন পোশাক ও গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী কেনেন। মহাজনের ধার মেটান। পয়লা বৈশাখ হালখাতা পুজোর পর নতুন লেনদেন শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। নতুন বছরের শুরুতে কালনার বাজার বেশ জমজমাট থাকে। কিন্তু এ বার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাষিদের পুরনো ধার শোধ হয়নি। বকেয়া অর্থ আদায় না হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও চিন্তায় রয়েছেন।

ফাঁকা সেলের বাজার। কালনায়। মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

কালনা ১ ব্লকের আকন্দপুকুর গ্রামের কীটনাশক বিক্রেতা খোকন মল্লিকের দাবি, “আলু চাষের জন্য দেনা করে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি কীটনাশক তুলেছিলাম। সেগুলি ধারে বিক্রি হয়েছে। প্রতি বার চাষিরা আলু বিক্রি করে টাকা মিটিয়ে দেয়। কিন্তু এ বার কমবেশি মাত্র ৩০ হাজার আদায় হয়েছে।” মেমারির এক ট্রাক্টর মালিক পরেশ ঘোষ বলেন, “চাষের শুরুতে চাষিরা ট্রাক্টর ভাড়া করে নিয়ে যায়। তারপর ফসল বিক্রি করে টাকা মেটায়। কিন্তু এ বার আলুর দাম নেই। বকেয়া টাকাও বাকি রয়েছে।”

আলু চাষে বিপর্যয়ের সঙ্গেই যোগ হয়েছে ১০০ দিনের কাজ না পাওয়ার সমস্যা। গত কয়েক মাসে পঞ্চায়েতগুলি ১০০ দিনের কাজ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। আগে যে কাজ হয়েছে তার টাকাও বকেয়া রয়েছে। কালনা ২ ব্লকের চাষি রফিকুল মোল্লার আক্ষেপ, “আগে উৎসব এলে ১০০ দিনের কাজের টাকা মিটিয়ে দিত পঞ্চায়েত। সেই টাকা কাজে আসতো। এ বার এক দিকে ধান ও আলুর অভাবি বিক্রি। অন্য দিকে ১০০ দিনের কাজ নেই। ফলে নতুন বছরের আগে আমাদের দেনা ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই বাড়ির গয়না বন্ধক রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।” যদিও এই অবস্থায় চাষিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু। তাঁর দাবি, “গতবারের থেকেও বেশি সহায়ক মূল্য দিয়ে এ বার ধান কেনা হয়েছে। সহায়ক মূল্য দিয়ে আলু কেনার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রাজ্য সরকার চাষিদের পাশে রয়েছে।”

কালনা শহরের শাহু সরকারের মোড়ের একটি পোশাকের দোকানের মালিক সুমিত বসু জানান, ১লা মার্চ থেকে চৈত্র সেল শুরু হয়েছে। চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু বিক্রি খুব কম। নতুন ইংরেজি মাস পড়লে চাকুরিজীবীরা কেনাকাটা করতে আসবেন। এই আশাতেই এখন বুক বাঁধছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা। তবে শুধু পোশাকের বাজারই নয়, মুদিখানার দোকানগুলিতেও একই অবস্থা। পাওনা টাকা আদায় হয়নি। দৈনিক বিক্রি ভাল নয়। কালনার চায়ের দোকান, রাস্তাঘাটে কান পাতলেই এখন একটি কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে।

লাভের আলু চাষ এ বার যেন পথে বসিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE