Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের দ্বন্দ্বে রং লাগছে রাজনীতির

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি পালের দাবি, মঙ্গলবার তাঁকে মারধর শুধু নয়, স্কুলে তাঁর শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয়।

প্রধান শিক্ষিকা না এলেও স্কুল হল বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রধান শিক্ষিকা না এলেও স্কুল হল বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যে দ্বন্দ্বের শুরু, তা ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে পূর্বস্থলী সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে স্কুল পরিচালন সমিতি এবং সহ-শিক্ষিকদের একাংশের বিবাদে লেগেছে রাজনৈতিক রংও।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি পালের দাবি, মঙ্গলবার তাঁকে মারধর শুধু নয়, স্কুলে তাঁর শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয়। বুধবার তিনি জানান, ওই হামলার জেরে অসুস্থতা ও নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। তাই ডাকযোগে সমস্ত ঘটনা লিখে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক, পূর্বস্থলী থানা একাধিক জায়গায়। পুলিশের কাছে তাঁর আর্জি, এই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এফআইআর করা হোক। অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, দলের জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল দাসের। যদিও অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ওই দুই নেতা। তাঁদের পাল্টা দাবি, প্রধান শিক্ষিকার কারণেই স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বস্থলীর মেয়েদের ওই স্কুলে সমস্যা দীর্ঘদিনের। নানা মতানৈক্যের কারণে স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষিকার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে প্রধান শিক্ষিকার। স্কুল পরিচালন সভাপতি নিয়োগের ঘটনা নিয়ে প্রথমে প্রশাসনিক অভিযোগ এবং পরে হাইকোর্টে মামলা করার পর থেকে শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও মনোমালিন্য শুরু হয় মৌসুমিদেবীর। সম্প্রতি স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রতি অশালীন আচরণ করা হয়েছে জানিয়ে পূর্বস্থলী থানায় তিনি তপনবাবু, বিপুলবাবু এবং পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেন। প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পাল্টা স্কুলের তহবিল তছরুপের অভিযোগ করেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি।

স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি স্কুলের ছাত্রীদের একাংশও মৌসুমিদেবীর বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে। ওই ছাত্রীরা নানা জায়গায় প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পোস্টারও সাঁটায়। এই পরিস্থতিতে ১৩ জানুয়ারি থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন মৌসুমিদেবী। তাতে স্কুলের প্রশাসনিক কাজে বিস্তর জটিলতা দেখা দেয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে পূর্বস্থলী রেলের মাঠে এক সভায় প্রধান শিক্ষিকার হয়ে সওয়াল করে জেলার এক বিজেপি নেতা অভিযোগ করেন, মৌসুমিদেবীর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা। সভায় উপস্থিত মুকুল রায়ও ঘটনাটি নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করেন। এর পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার দূরত্ব আরও বাড়ে। বিজেপি-র অন্যতম রাজ্য সম্পাদক, পূর্বস্থলীর বাসিন্দা রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘শিক্ষিকার উপরে অন্যায় আক্রমণ হয়েছে। শাসকদলের জন্য স্কুলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। আমরা শিক্ষিকার পাশে আছি।’’

কী হয়েছিল মঙ্গলবার?

ওই দিন স্কুলে একটি মামলার তদন্তে পুলিশ গেলে প্রধান শিক্ষিকাও হাজির হন। অভিযোগ, এই সময় অন্য কিছু শিক্ষিকা মৌসুমিদেবীর কাছে তাঁর নিজের আয়কর সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে বসেন। স্কুলের সভাপতি আশিসবাবুর অভিযোগ, ‘‘রেগে গিয়ে উনি চাবি ছুড়ে মারেন ইংরেজির এক শিক্ষিকাকে লক্ষ করে। তাতে তিনি চোট পান। চিকিৎসা করাতে হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।’’ এর পরেই সহ-শিক্ষিকারা প্রধান শিক্ষিকাকে তাঁর ঘরে তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মৌসুমিদেবীর অভিযোগ, বিকেলে স্কুলে এসে মোবাইল দিয়ে আঘাত করে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন প্রাক্তন বিধায়ক তপনবাবু ও জেলা পরিষদ সদস্য বিপুলবাবু। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন।

তপনবাবু মঙ্গলবারই দাবি করেছিলেন, তিনি মঙ্গলবার স্কুলে যাননি। অভিযোগ মিথ্যা। বুধবার বিপুলবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে অশান্তির খবর পেয়ে ছুটে আসি। আমার মেয়েও এই স্কুলে পরে। প্রধান শিক্ষিকার গায়ে কেউ হাত দেয়নি। উনি ঘরে বসে নিজেই মাথা ঠুকে নিজেকে আহত করেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ছেলেমেয়েদের স্বার্থে চেষ্টা চলছে মৌসুমিদেবীর জায়গায় অন্য কাউকে স্কুলের ভার দেওয়ার। আশিসবাবু বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে না আসায় কষ্ট করে চালাতে হচ্ছে মিড-ডে মিল। কোনও রকমে চাঁদা তুলে সরস্বতী পুজো হয়েছে। উনি সই না করায় স্কুলের তহবিল থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না। ওঁর জায়গায় কাউকে নিযুক্ত না করা হলে শিক্ষিকাদের বেতন নিয়েও সমস্যায় পড়তে হবে।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘স্কুলটির সমস্যার কথা জেনেছি। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আলোচনা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE