Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভাগ্নেকে পিটিয়ে খুন, ধৃত ৩ মামা

আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ইস্ট) অভিষেক মোদী বলেন, “পারিবারিক বিবাদের জেরে এমন ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। তিন জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

ঘটনাস্থল: মাঠে পড়ে রয়েছে রক্ত। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: মাঠে পড়ে রয়েছে রক্ত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অন্ডাল শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১০
Share: Save:

ভাগ্নেকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল চার মামার বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে অন্ডালের চনচনি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ভূমিত্র রুইদাস (২৪)। খুনের অভিযোগে তিন মামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি একজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এ দিকে, খুনের খবর চাউর হতেই অভিযুক্তদের বাড়ি চড়াও হন প্রতিবেশীরা। তাঁরা অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর চালান। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, এই পরিবারের কাউকে তাঁরা এই এলাকায় বাস করতে দেবেন না। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ইস্ট) অভিষেক মোদী বলেন, “পারিবারিক বিবাদের জেরে এমন ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। তিন জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমিত্রের বাড়ি পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি রুইদাস পাড়ায়। তবে ছোট থেকে সে মামারবাড়ি চনচনি এলাকায় থাকত। তাঁর দিদিমা পুতুলা রুইদাসের কোনও ছেলে নেই। বোনের চার ছেলে ধরম, সমিত, অমর এবং ধীরাজের সঙ্গেই থাকেন। নিহতের বাবা ধীরেনবাবু জানান, শাশুডির বোনের ছেলেদের সঙ্গে সম্পত্তির ভাগ নিয়ে বিবাদ চলছিল। ধীরেনবাবু বলেন, “সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য আমাদের ভয় দেখাতে ষড়যন্ত্র করে আমার চার মাসতুতো শালারা এমন নৃশংসভাবে আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারল। অন্ডাল থানায় চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’

শুধু কী সম্পত্তি নিয়েই ঝামেলার জেরে এই খুন?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ দুই মামা ধীরাজ ও অমর শৌচকর্ম করতে বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়েছিল ভূমিত্রও। অভিযোগ, মাঠে বসা মাত্রই অমর তাঁকে তুলে আছাড় মারেন। ধীরাজ চেপে ধরেন। মুহূর্তের মধ্যে বড় মামা ধরম ও ছোট মামা সমিত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বড় মামা তাঁর মাথায় রড দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভূমিত্রের। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে পুলিশ চেকপোস্ট। ভাগ্নেকে মেরে পালাতে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবকের চিৎকারে চেকপোস্টের দুই সিভিক ভলান্টিয়ার ধরম ও ধীরাজকে ধরে ফেলে। পরে পুলিশ সুমিতকে গ্রেফতার করে।

এ দিনের ঘটনার পরে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন দিদিমা পুতুলাদেবী। নিহতের মা সুন্দরীদেবী বলেন, ‘‘নিজের কোনও ভাই নেই। তাই চার মাসতুতো ভাইকেই নিজের ভাই ভাবতাম। ছোট থেকে ভূমিত্র ওদের কাছে বড় হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে ওদের সঙ্গে মাঠে চাষের কাজ করত। কোনও দিন মনে হয়নি ওরা ভূমত্রিকে এমন ভাবে মেরে ফেলবে! তাদের শাস্তি চাই।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শুধু সম্পত্তি নয়, পারিবারিক একটি সম্পর্ক নিয়েও বিবাদ চলছিল। তার জেরেও এমন হয়ে থাকতে পারে।

উখড়া পঞ্চায়েতের সদস্য সন্ন্যাসী বাউরি ও প্রধান দয়াময় সিংহ নিহতের পাড়ায় গিয়েছিলেন। সন্ন্যাসীবাবু বলেন, “ওদের পারিবারিক অশান্তি বেশকিছু দিন ধরে চলছিল। রবিবার দুপুরে তা তুঙ্গে উঠেছিল বলে শুনেছিলাম। সোমবার এমন পরিণতি হবে বুঝতে পারিনি।’’ পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “প্রশাসন উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime murder অন্ডাল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE