Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পশহর ফের ঘাসফুলের

একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। এ দিন গণনা শুরুর মিনিট কুড়ির মধ্যেই দু’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর জয় ঘোষণা করা হয়। বিজয় উল্লাসের সেই শুরু। একের পর এক ফল ঘোষণা হয়েছে, আর ঢাক-ঢোল, তাসার আওয়াজ বেড়েছে।

জয়: আবার দুর্গাপুর পুরসভায় ক্ষমতায় তৃণমূল। উল্লাস সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

জয়: আবার দুর্গাপুর পুরসভায় ক্ষমতায় তৃণমূল। উল্লাস সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৩
Share: Save:

বিরোধীদের উপস্থিতি নেই। গণনাকেন্দ্রের সামনে শুধু ভিড় শাসক দলের কর্মীদের। ঢাক-ঢোল, আবির, ভেঁপু নিয়ে সকাল থেকেই হাজির তাঁরা। নানা ওয়ার্ডের ফল যত সামনে এল, বাড়ল তাঁদের উচ্ছ্বাস-উল্লাস। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ৪৩-০ ফলে জিতে আবার পুরসভার ক্ষমতা দখল করার পরে সবুজ আবিরে ঢাকল আকাশ।

নোটিফায়েড এরিয়া থেকে দুর্গাপুর পুরসভা হয় ১৯৯৭ সালে। পরপর তিন বার বোর্ড গড়ে বামেরা। ২০১২ সালেই প্রথম ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তবে গত বিধানসভা ভোটে শহরের দু’টি আসনই হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে তারা। তাই এ বার পুরভোটে বোর্ড দখলে রাখা ছিল তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ। সে জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন দলের নেতারা। তারই ফল মিলল বলে মনে করছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। নিজেদের আমলে ‘লাল দুর্গ’ বলে পরিচিত এই অঞ্চলে বামেরাও যা পারেনি, সেই বিরোধীশূন্য পুরবোর্ড গড়তে চলেছে তৃণমূল।

এ দিন জয়ের পরে তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বন্যার জন্য দলের নির্দেশে কোনও বিজয় মিছিল করা হবে না। নতুন কাউন্সিলরদের বলে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক দিন তিন ঘণ্টা করে ওয়ার্ডে মানুুষের সঙ্গে দেখা করতে হবে। সমস্ত পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার যত দ্রুত সম্ভব খুলে শহর পরিচ্ছন্ন করে দিতে হবে।’’

একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। এ দিন গণনা শুরুর মিনিট কুড়ির মধ্যেই দু’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর জয় ঘোষণা করা হয়। বিজয় উল্লাসের সেই শুরু। একের পর এক ফল ঘোষণা হয়েছে, আর ঢাক-ঢোল, তাসার আওয়াজ বেড়েছে। প্রার্থীরা জয়ের শংসাপত্র নিতে গণনাকেন্দ্রে ঢোকার সময়েও গলা চড়িয়ে স্লোগান দিয়েছেন কর্মীরা। শেষ ওয়ার্ডের ফল ঘোষণা পর্যন্ত চলেছে এই উল্লাস।

ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, এ বার মোট ভোটার ছিলেন ৪,২০,২৬৬ জন। ভোট পড়ে প্রায় ৭৯ শতাংশ। প্রদত্ত ৩,২২,৩৬০টি ভোটের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২,২৯,০৬২টি। অর্থাৎ, প্রায় ৭১ শতাংশ। বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট ৪৫,৬৪৭টি। যা ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। বামেরা ৩৬,৬৬৭টি ভোট পেয়েছে। শতাংশের হিসেবে যা ১০-এর কিছু বেশি ভোট। কংগ্রেস পেয়েছে ৭৮০১টি, অর্থাৎ প্রায় আড়াই শতাংশ ভোট।

বিরোধীদের দাবি, ভোটে যে দেদার ছাপ্পা পড়়েছে, তা কয়েকটি ওয়ার্ডের ফল দেখলেই পরিষ্কার। যেমন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছে ১২১৬৮টি ভোট। সেখানে বিজেপি ৭৩৭ এবং সিপিএম ৫৫৫টি ভোট পেয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে এই ওয়ার্ডেই জিতেছেন তৃণমূলের শিপ্রা সরকার। আরও ১৩টি ওয়ার্ডে পাঁচ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছে তৃণমূল। সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, ‘‘শহরে ১৫ হাজার দুষ্কৃতী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে ছিল।’’ কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘সে দিন যা হয়েছে তা শহরবাসী কোনও দিন ভুলতে পারবেন না। এর জবাব এক দিন তৃণমূলকে পেতে হবে।’’ বিজেপি-র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোটের নামে এমন প্রহসন বিশ্বাস হয় না!’’

তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র একশো ভোটে জিতেছেন তাঁদের প্রার্থী। শহর জুড়ে ভোট লুঠ হয়ে থাকলে এখানে এই ব্যবধান হল কী করে, প্রশ্ন নেতাদের। দলের পক্ষে এই ভোট পরিচালনায় অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের মানুষ উন্নয়ন চান, তাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিরোধীরা মিথ্যে অভিযোগ না করে বরং বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকতে শিখুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE