চলছে অবরোধ। দুর্গাপুর স্টেশনে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
ক্ষমতায় এসে ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচি থেকে তাঁর দল বিরত থাকবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের (এএসপি) কৌশলগত বিলগ্নিকরণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোমবার দুর্গাপুর স্টেশনে তৃণমূল রেল অবরোধ করল। এর ফলে বেশ কয়েকটি ট্রেনও আটকে পড়ে। ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরা।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন, কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিল থেকেই স্টেশনে ঢুকে রেললাইনে নেমে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। শুরু হয়, কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান।
এই অবরোধের জেরে আটকে পড়ে পূর্বা এক্সপ্রেস, বিভূতি এক্সপ্রেস ও বর্ধমান-আসানসোল প্যাসেঞ্জার ট্রেন। অবরোধ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন যাত্রীরাও। মধ্যমগ্রামের সাম্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারখানা নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে তা উপযুক্ত জায়গায় বলা দরকার। রেল অবরোধে শুধু যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে।’’ রানিগঞ্জের একটি কলেজের পড়ুয়া বন্দনা ভারতী জানায়, এদিন ‘ইন্টারন্যাল পরীক্ষা’ রয়েছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এমন পরিস্থিতির মাঝে পড়ে আদৌ পরীক্ষা দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ এমন অবরোধ-কর্মসূচিতে ফিরল কেন তৃণমূল? এএসপি-র শ্রমিকদেরই একাংশের মতে, এর নেপথ্যে রয়েছে ‘রাজনৈতিক জমি দখলের চেষ্টা।’ কারণ, এএসপি নিয়ে বরাবর একজোট হয়ে আন্দোলন করেছে সিটু ও আইএনটিইউসি। কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছিলেন দুই সংগঠনের নেতারা। সম্প্রতি এএসপি-র সমবায় নির্বাচনেও সব আসনে জয়ী হয় আইএনটিইউসি। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের রাশ ধরে রাখতে আইএনটিটিইউসি-র উপরে ভরসা না রেখে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরাসরি মাঠে নেমেছে তৃণমূল। ওই দিন থেকে কারখানা গেটের সামনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি, নেওয়া নানা ওয়ার্ডে মিছল বের করতে দেখা যায় তৃণমূলকে। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, দলেরই একাংশে প্রশ্ন ওঠে কারখানার গেটে বসে স্লোগান দিলে তা কী ভাবে পৌঁছবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের ‘দৃষ্টি আকর্ষণে’র জন্যই অবরোধ কর্মসূচি বলে দাবি তৃণমূলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি ভীমসেন মণ্ডল। তিনি আরও জানান, এ দিনের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি দিন তিনেক আগেই দুর্গাপুরের স্টেশন ম্যানেজারকে জানিয়েছিলেন।
যদিও এই অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এএসপি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই থেকে সরে আলাদা করে অবরোধ করছে তৃণমূল। এটা অন্যায় কাজ করছে। যদি তৃণমূল মনে করে যে ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান ও দায়িত্বের পরিচয় তারা দেবে, তা হলে এএসপি বাঁচানোর লড়াইয়ে আমাদের বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের পাশে দাঁড়াক।’’ কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, তিনি, ধর্মঘট, অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে। অথচ, দুর্গাপুরে তাঁরই দলের নেতা-কর্মীরা রেল অবরোধ করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলল।’’
যদিও এএসপি বাঁচাতে ‘সবরকম আন্দোলন হবে বলেই জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা উত্তমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মানছি এমন কর্মসূচিতে যাত্রীরা কিছুক্ষণ সমস্যায় পড়েছে। তার জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু এএসপি বাঁচাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যা যা করা সম্ভব, দল তাইই করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy