উৎসবের মরসুমে দুর্ঘটনা মোকাবিলা নিয়ে চলছে আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র।
উৎসবের মরসুম মানেই ভিড়। আর ভিড় মানেই যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনার যথেষ্ট সম্ভাবনা। তা রুখতে আগাম কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় বা পরিকল্পনা মাফিক মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে পুলিশ, দমকল ও পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালা হল দুর্গাপুরে। বুধবার দ্য মিশন হাসপাতালে এই কর্মশালায় বক্তারা জানান, ওই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু জানান, সামনে টানা উৎসবের মরসুম। সেই সময়ে কোনও দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ের জেরে উৎসবের আনন্দ যাতে কোনও ভাবে মাটি না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই হাসপাতালের তরফে এ দিন এই ‘মাস গ্যাদারিং মেডিসিন সিম্পোসিয়াম’ নামে এই কর্মশালার আয়োজন হয়। তিনি আরও জানান, ‘মাস গ্যাদারিং মেডিসিন’ বিষয়টি এ দেশে নতুন। সম্প্রতি সৌদি আরবে বহু হজযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পরে তা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। সত্যজিৎবাবু বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় বহু মানুষের সমাগম হয় মণ্ডপে-মণ্ডপে। শুধু পুজো নয়, খেলাধুলো, অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভার মতো বহু ক্ষেত্রেই ভিড় জমে। বিপদ এড়াতে আগাম কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, ভিড়ের সময়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আগাম পরিকল্পনা কী, কী ভাবে আক্রান্তদের অতি দ্রুত জরুরি চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা যায়— এ সবই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’’
কর্মশালার সূচনা করে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের ‘ইমার্জেন্সি মেডিসিন’-এর সহকারী অধ্যাপক তথা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি মেডিসিন প্রোগ্রাম’-এর ডিরেক্টর জন আর অ্যাকেরা জানান, আমেরিকায় কোনও জনসমাগমে দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে-সঙ্গে আশপাশের হাসপাতালগুলিতে খবর দেওয়া হয়। যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন। এর ফলে আক্রান্তেরা হাসপাতালে পৌঁছনোর সঙ্গে-সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়। দ্য মিশন হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থ ঘোষ জানান, যেখানেই বেশি মানুষের জমায়েত সেখানেই গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকে। যেমন, পুজো মণ্ডপ ভেঙে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পুজোর উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা যদি মণ্ডপের নকশা, প্রবেশ-প্রস্থানের নির্দিষ্ট পথ এবং তা কত চওড়া— এই ধরনের সব তথ্য আগে থেকে জেনে রাখেন তাহলে আক্রান্তদের বের করতে সুবিধা হবে। আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখতে হবে। এক সঙ্গে বহু রোগীকে কোনও হাসপাতালে পাঠালে সেখানকার পরিকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। তাই বিভিন্ন হাসপাতালে সংখ্যা ভাগ করে রোগীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে দল গড়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে আরও ভাল হয় বলে জানান পার্থবাবু। হাসপাতালের ‘ইএমএস অ্যান্ড প্রি-হসপিটাল কেয়ার’ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অভিষেক চট্টোপাধ্যায় মণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবক, সিভিক ভলান্টিয়ার, দমকলকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের উপরে জোর দেন।
পুজোর সময়ে বহু চিকিৎসক ছুটিতে চলে যাওয়ায় সমস্যা দেখা যায়। দ্য মিশন হাসপাতালের সিইও গৌতম সমাদ্দার অবশ্য জানান, পুজোর দিনগুলিতে পরিষেবা যাতে কোনও ভাবে ব্যাহত না হয় সে জন্য জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা কেউ ছুটিতে যান না। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানোও হয়। তাই পুজোর মরসুমে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের হাসপাতাল সাধ্য মতো সহযোগিতা করবে বলে তাঁর আশ্বাস। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ কর্মশালায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সচেতন হলেই হবে না। সংবেদনশীলও হতে হবে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে খবর দিতে হবে। কারণ, অগ্নিকাণ্ড ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সবার আগে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তাই দ্রুত খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’’ দমকল বিভাগের আধিকারিক জানান, মণ্ডপের মতো অস্থায়ী কাঠামোর ক্ষেত্রে আগুন লাগলে যাতে ন্যূনতম ক্ষতি হয় সে জন্য কোন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করতে হবে, আগুন লাগলে দ্রুত কী ব্যবস্থা নিতে হবে, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাগুলি কী ভাবে চালাতে হবে— এ সব বিষয় নিয়ে একটি সিডি তৈরি করা হয়েছে। তা সমস্ত পুজো মণ্ডপে শীঘ্র পৌঁছে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy