তৃণমূলের বিজয়মিছিল। কেতুগ্রামের সীতাহাটিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ফল পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা ছিলই, বুধবার উপনির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা গেল তৃণমূলকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নির্দল প্রার্থী। ভাতারের একটি আসনেও তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছে সিপিএম।
জেলার ৩৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০টি পঞ্চায়েত ও ১টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় তৃণমূল। বাকি ২৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২০টি, সিপিএম ৩টি ও নির্দল একটি আসনে জয়লাভ করেছে। তৃণমূলের একাংশের দাবি, ওই এলাকাগুলির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দলের হারের কারণ। কারণ কোথাও তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধরা নির্দলকে সমর্থন করেছেন, আবার কোথাও সিপিএমকে।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, মানুষ যেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন, সেখানে তৃণমূল হেরেছে কিংবা বিরোধীদের সঙ্গে সমানে-সমানে টক্কর দিয়েছে। যেমন সিপিএমের অভিযোগ, রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির ১৫ নম্বর আসনে তৃণমূল ২৬৯৪টি ভোট পেয়েছে, সেখানে সিপিএম পেয়েছে মাত্র ৫৯৫টি। আবার রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৩ নম্বর আসনে তৃণমূল ৪ হাজার ৭৫০ ভোটে জিতেছে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ৫০০৩, সেখানে সিপিএমের ঝুলিতে ভোট পড়েছে ২৫০টি। খণ্ডঘোষ, কেতুগ্রামেও একই ছবি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, “উপ-নির্বাচনেও দেদার ছাপ্পা ভোট পড়েছে। মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ হটিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের ফল দেখলেই তা বোঝা যাবে।” তবে রায়না-খণ্ডঘোষের তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা উত্তম সেনগুপ্তের জবাব, “হেরে গিয়ে সিপিএম অভিযোগ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের জোয়ার দেখে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের ভোট দিয়েছেন।”
তবে তৃণমূল যে চারটি আসনে হেরেছে তার পিছনে প্রাথমিক ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন দলের একাংশ। দলের কিছু নেতা-কর্মীদের দাবি, ভাতারে বিধায়ক বনমালী হাজরার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধরা। তারপরেও ওই আসনে তৃণমূল জিতেছে, কিন্তু ভাতারের বামশোল ও নিত্যানন্দপুরের মুরাতিপুরে বিক্ষুব্ধরা সিপিএমকে সমর্থন করেছে বলে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। এর মধ্যে মুরাতিপুর গ্রামের আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সিপিএম। ভাতারের বিধায়ক বনমালী হাজরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে ওই দুটি আসন হাতছাড়া হয়েছে। মেমারি ২ ব্লকেও তৃণমূলের সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল বাগের তীব্র দ্বন্দ্ব ছিল। এই ব্লকের বিজুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জ্যোৎরাম গ্রামের আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন লায়লি হাঁসদা, সেখানে অমলবাবুরা কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল বলে দাঁড় করিয়েছিল বাঁকা হাঁসদাকে। নির্বাচনের দিন অমলবাবুদের দফতর ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল দিকে। এ দিন ভোটের ফল বেরনোর পর দেখা যায় নির্দল প্রার্থী ২০ ভোটে জিতে গিয়েছে। অমলবাবু বলেন, “আমাকে দল প্রশাসন চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। কেন হারলাম তার জবাব দলের ব্লক সভাপতির কাছে নিতে হবে।” ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগযোগ করা যায় নি।
কালনায় আবার যা প্রত্যাশিত ছিল, সেটাই হয়েছে। ভোটের দিন বুথ দখল, ভোট লুঠের অভিযোগ তুলে এসটিকেকে রোড অবরোধ করেছিল সিপিএম। ফলাফলের দিনেও সিপিএম নেতৃত্ব দাবি করেন, ভোট সঠিক ভাবে হলে ফল অন্যরকম হতো। যদিও কালনা ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায় জানান, বহু মানুষ উন্নয়নে আস্থা রেখেছিলেন। তাই বড় ব্যবধানে জয় এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy