Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
অরক্ষিত কিসান মান্ডি

কর্মী নেই, ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ব্লকে ব্লকে গড়ে ওঠা কিসান মান্ডির অধিকাংশই সেভাবে চালু হয়নি। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের কিসান মান্ডিটিরও একই দশা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে কোনও কর্মী বা নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলেনি বলে চাষিরা জানিয়ছেন। বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

কোনও কর্মী নেই। খোলা মান্ডির ভিতরে চাষিরা। নিজস্ব চিত্র

কোনও কর্মী নেই। খোলা মান্ডির ভিতরে চাষিরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

চাষিদের সঙ্গে ক্রেতাদের সরাসরি যোগাযোগ এক কথায় কিসান মান্ডি বা কৃষক বাজার তৈরির উদ্দেশ্য এটাই। এ রাজ্যে চাষিরা যে ফসল ফলান, তা বিক্রি করতে তাঁদের বেশির ভাগই নির্ভরশীল ফড়েদের উপরে। সম্পন্ন চাষি বা সরাসরি বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন, এমন চাষির সংখ্যা এখানে হাতেগোনা। ফলে, ফড়ে যে দাম দেন, তাতেই ফসল বিক্রি করতে হয় চাষিদের।

কৃষকদের সুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বছর দেড়েক আগে রাজ্যের সমস্ত ব্লকে একটি করে কিসান মান্ডি তৈরির রূপরেখা তৈরি করে কৃষি বিপণন দফতর। স্থানীয় চাষিরা যাতে নিজের খেতের ফসল ওই সব বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সেটাই ছিল প্রশাসনের লক্ষ্য।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ব্লকে ব্লকে গড়ে ওঠা কিসান মান্ডির অধিকাংশই সেভাবে চালু হয়নি। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের কিসান মান্ডিটিরও একই দশা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে কোনও কর্মী বা নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলেনি বলে চাষিরা জানিয়ছেন। বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

কৃষি বিপণনে ব্লক স্তর পর্যন্ত উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলাই ছিল কিসান মান্ডি গড়ার উদ্দেশ্য। যেখানে কোনও চাষি সরাসরি তাঁর জমিতে উত্পাদিত পণ্য সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। প্রকৃত বাজার হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিকাঠামোই গড়া হয়েছে মান্ডিগুলিতে। তার পরেও সেগুলি জনপ্রিয় হয়নি। ফাঁপড়ে পড়ে রাজ্য সরকার কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা, রাজ্যের কৃষি সচিব, কৃষি বিপণন সচিব প্রমুখকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে। কীভাবে মান্ডিগুলিকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় তা খতিয়ে দেখছে কমিটি। ইতিমধ্যে রাজ্যের খাদ্য দফতর রাজ্যের বেশ কিছু কিষান মান্ডিকে ধান, চাল কেনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্যোগী হয়েছে। কাঁকসার কিষান মান্ডিতেও সে কাজ চলছে।

কিন্ত কাঁকসা ব্লকের চাষিরা জানিয়েছেন, মান্ডিটি পানাগড়ের জনবহুল এলাকা ছাড়িয়ে রাজবাঁধে জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে গড়া হয়েছে। এর ফলে চাষি ও ক্রেতা-দু’তরফেই সমস্যা। তাই সেখানে এখনও বিক্রি-বাট্টা শুরু হয়নি। শুধু ধান বিক্রির কাজ হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে গিয়ে কিসান মান্ডিতে কোনও কর্মী বা নিরাপত্তারক্ষীর দেখা না পেয়ে ফাঁকা হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। ধান বিক্রির জন্য তাঁরা কার্ড বানাতে গিয়েছিলেন। বিদবিহার এলাকার চাষি দশরথ সাহা বলেন, ‘‘বিকেল ৩টে নাগাদ গিয়ে দেখি, দরজায় তালা ঝুলছে। কোনও কর্মী নেই। নিরাপত্তারক্ষী নেই। বিদবিহার থেকে কিসান মান্ডি প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ।’’ আর এক চাষি কৃষ্ণ মহাদুলি বলেন, ‘‘কিসান মান্ডিতে গিয়ে দেখি কেউ কোথাও নেই। এত দূর থেকে এসে ফাঁকা হাতে ফিরে যেতে হল।’’ তিনি আরও জানান, গেট খোলা ছিল। একমাত্র অফিস ঘরে তালাবন্ধ ছিল।

সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়ে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কাঁকসার বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, অতীতে বিভিন্ন কাজে তিনি কিসান মান্ডিতে গিয়ে নিরপত্তাকর্মীদের দেখা পেয়েছেন। তবে এ দিন কী হয়েছে তা তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত কিসান মান্ডিতে কর্মীরা থাকেন। হয়তো চাষিরা তার পরে গিয়েছিলেন বলেই সমস্যা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা কেন ছিলেন না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE