সন্ন্যাসী সরেন।
আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে শ্মশানে কালীপুজো করছিলেন আদিবাসী সাধক। ১৯ জনের দলে ছিল জনা ছয়েক কিশোর-কিশোরী। রটে যায়, শিশু চুরি করে এনে বলি দেওয়া হচ্ছে পুজোয়। বৃহস্পতিবার রাতে গুজবের জেরে ধুন্ধমার বাধল পূর্ব বর্ধমানের কালনার বৈদ্যপুর রথতলায়।
বিক্ষোভের হাত থেকে সন্ন্যাসী সরেন নামে ওই সাধক ও তাঁর আত্মীয়দের উদ্ধারে গেলে পুলিশের উপরে হামলা চালায় জনতা। প্রহৃত হন এক সাব ইনস্পেক্টর-সহ ছ’জন পুলিশকর্মী ও ভিলেজ পুলিশ। মারধর করা হয় সন্ন্যাসীর স্ত্রী-সহ দুই মহিলাকে। কালনা থানা থেকে আরও পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তাঁদের। খুনের চেষ্টা, পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে রাতভর তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৫ জনকে।
আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দাদা
সন্ন্যাসীর বাড়ি কালনারই তেহাট্টা গ্রামে। সেখান থেকে কিলোমিটার আটেক দূরে ওই শ্মশানে কালীপুজো করতে এসেছিলেন তিনি। ছিলেন তাঁর স্ত্রী, কয়েক জন আত্মীয় ও তাঁদের ছেলেমেয়েরা। প্রতিমা ছাড়াও এনেছিলেন খাঁড়া, তির-ধনুক, চাল-ডাল। অপরিচিত কয়েকজনকে পুজো করতে দেখে কিছু লোকের সন্দেহ হয়। এরই মধ্যে রটে যায়, আশপাশের গ্রামে বাচ্চা চুরি হয়েছে। ফলে, শ্মশানে ভিড় করে জনতা।
হাসপাতালে আহত ২ মহিলা।
খবর পেয়ে প্রথমে ভিলেজ পুলিশ, পরে কালনা থানা থেকে একটি গাড়িতে জনা চারেক পুলিশকর্মী শ্মশানে যান। জনতার অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে সন্ন্যাসী ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে থানায় রওনা হয় পুলিশ। কিন্তু পথে লাঠি, রড হাতে কয়েকশো লোক পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে। সন্ন্যাসী ও তাঁর সঙ্গীদের গাড়ি থেকে টেনে নামানোর চেষ্টা হয়। বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় এসআই পারভেজ হাসান-সহ পুলিশকর্মীদের। খবর পেয়ে কালনা থানা থেকে আরও কিছু পুলিশকর্মী পৌঁছন। কোনও মতে থানায় পৌঁছয় পুলিশের গাড়িটি। আহত দুই মহিলাকে কালনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সন্ন্যাসী বলেন, ‘‘আমার গুরু এই শ্মশানে পুজো করতেন। সেই রীতি মেনেই পুজো করতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে নিজের ছেলেমেয়েও ছিল। অযথা সন্দেহের বশে হামলা করা হল। পুলিশ না বাঁচালে হয়তো খুন হয়ে যেতাম!’’ এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘স্রেফ গুজবের জেরে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে কিছু লোক। পুলিশও আক্রান্ত হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ ধৃত ৪৫ জনকে শুক্রবার ১৪ দিনের জেল-হাজতে পাঠায় কালনা আদালত।
বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশুতোষ পাল বলেন, ‘‘এক-দেড় বছর ধরেই কালনার নানা জায়গায় গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটছে। সচেতন করতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। বৈদ্যপুরেও শিবির করা হবে।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy