Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাজে বাধা পঞ্চায়েতে, দাবি দাশুর

এ বার প্রায় একই সুরে সে কথা শোনা গেল তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের (দাশু) গলাতেও। সেই সঙ্গে দলের গোষ্ঠীকোন্দল মেটানোর বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

প্রায় এক বছর হল তৈরি হয়েছে নতুন জেলা। কিন্তু, আসানসোল ছাড়া জেলা জুড়ে সর্বত্র উন্নয়নের কাজ সে ভাবে হচ্ছে না। এমন অভিযোগ এত দিন শোনা গিয়েছিল বিরোধী সিপিএম, বিজেপি নেতাদের মুখে। এ বার প্রায় একই সুরে সে কথা শোনা গেল তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের (দাশু) গলাতেও। সেই সঙ্গে দলের গোষ্ঠীকোন্দল মেটানোর বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

রবিবার বাঁশড়া মাঠে পশ্চিম বর্ধমান জেলা এসসি, এসটি, ওবিসি সেলের কর্মী সম্মেলন আয়োজিত হয়। ওই সম্মেলনে দাশু ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল,আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি, তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান যুব জেলা সভাপতি ববিতা দাস, প্রাক্তন বিধায়ক সোহরাব আলি, আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক প্রমুখ।

সম্মেলনে যোগ দিয়ে দাশু বলেন, ‘‘এই জেলায় মন্ত্রী, বেশির ভাগ বিধায়ক, জেলা পরিষদ সবই তৃণমূলের দখলে। অথচ আসানসোলের মতো উন্নয়নের কাজ জেলা জুড়ে হচ্ছে না।’’ কেন তা হচ্ছে না, তারও ইঙ্গিত মিলেছে জেলা সভাপতির কথায়। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু বিধায়ক নিজেদের এলাকায় নির্বাচিত পঞ্চায়েতকেও কাজ করতে দিচ্ছেন না।’’ এ ভাবে চলতে থাকলে আখেরে তা দলের ভাবমূর্তির পক্ষেই ক্ষতিকর বলে দাবি করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দাশু বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপির কাছ থেকে তৃণমূল ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তা ছাড়া জনভিত্তিও হারাতে হবে।’’

জেলার শীর্ষ তৃণমূল নেতার মুখে এই মন্তব্য শুনে কর্মীদের একাংশের মধ্যেও তৈরি হয় চাপানউতোর। তাঁদের মতে, সম্প্রতি জেলা জুড়ে নানা এলাকায় একের পর এক নানা ঘটনায় শাসক দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এর প্রভাব আগামী পঞ্চায়েত ভোটেও পড়তে পারে কি না, তা নিয়েও শুরু হয় জল্পনা।

পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, অন্ডাল ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েতে সেই কোন্দল চরমে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তৃণমূলে সূত্রেই জানা যায়, গত বছর পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের নানা পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত তিন বার প্রকাশ্যে মারামারির ঘটনা সামনে আসে। অন্ডালে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে হেনস্থা, পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধেও মারধরের অভিযোগ ওঠে কিছুদিন আগে। সম্প্রতি উখড়া পঞ্চায়েতের প্রধান ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির মধ্যে গোলমাল বাধে। এ ছাড়া মাসখানেক আগে রানিগঞ্জের এগারায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে (গ্রামীণ) হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। গোষ্ঠী কোন্দলের তালিকা থেকে বাদ যায়নি রানিগঞ্জ শহরও। সেখানে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক সোহরাব আলি, আসানসোল পুরসভার ২ নম্বর বোরো চেয়ারম্যান সঙ্গীতা সারদার গোলমাল বাধে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে দাবি তৃণমূল কর্মীদের একাংশের।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতার এমন মন্তব্যের কথা চাউর হতেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, ‘‘আমরা আগেই অনুন্নয়নের কথা বলেছিলাম। এখন শাসক দলের শীর্ষ নেতার মুখেই এ কথা। এ তো নিজেদের ভুল স্বীকার করার মতো।’’ লোকসভা ভোট নিয়ে দাশুর মন্তব্যটি নিয়ে বিজেপি-র আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি সভাপতি সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের জয় যে নিশ্চিত, তা প্রতিপক্ষ দলের নেতার মুখেই শোনা গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE