Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙচুর, আগুনে মিটল ভোট

বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদেরও বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বিজেপি-র। সিপিএমের আরও অভিযোগ, ৫, ২৩, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

কাদা রোডে আগুন দু’টি মোটরবাইকে। নিজস্ব চিত্র

কাদা রোডে আগুন দু’টি মোটরবাইকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৫
Share: Save:

আগের দিন সন্ধে থেকেই ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠছিল। রবিবার সকালে ভোট শুরুর আগেই বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী প্রার্থীদের মারধর, পোলিং এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। বেলা যত গড়াল ভাঙচুর, হামলায় অশান্ত হয়ে উঠল শহর।

সকালে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী অনিতা সরকার অভিযোগ করেন, তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে মারধর করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে পোলিং এজেন্টের কাগজপত্র। সিপিএমের অভিযোগ, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিওজিএল ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়। ২৭, ২৯, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাম্পও ভাঙচুর করা হয়। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে পোলিং এজেন্টদের পুলিশের সামনেই বের করে দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর থেকেই সেখানে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। একই অভিযোগ ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডেও।

সিপিএমের আরও অভিযোগ, ৫, ২৩, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে ভোট শুরুর পরেই বি-জোন বয়েজ হাইস্কুলের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী সোমা মণ্ডলকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাম সমর্থিত এসইউসি প্রার্থী সুচেতা কুণ্ডুরও অভিযোগ, তাঁকে হেনস্থা করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।’’ কংগ্রেসের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী জয়িতা প্রসাদও একই অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদেরও বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বিজেপি-র। দলের নেতারা অভিযোগ করেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী প্রদীপকুমার মণ্ডলকে ৪৬ নম্বর বুথে একটি ঘরে ঢুকিয়ে মারধর করা হয়। তিনি এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর পেয়ে ওই বুথে গিয়েছিলেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী পিন্টু সেন বলেন, ‘‘৭৯ নম্বর বুথে পোলিং এজেন্ট, আমার মেয়ে শম্পাকে মারধর করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’’ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী চিরঞ্জিত ধীবরের অভিযোগ, ‘‘ভোট লুঠ রুখতে গেলে আমায় রড, লাঠি দিয়ে মারা হয়।’’ ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বুথে ঢোকার মুখে দলের প্রার্থী অভিজিৎ দত্তকে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

সকালে বড় গোলমাল বাধে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকার সব ক’টি বুথ তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগতরা দখল করেছে অভিযোগ তুলে বিজেপি ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু করে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সেখানে একটি বোমা ছোড়া হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। অভিযোগ, ভয় দেখাতে এলাকার নানা জায়গায় বোমা রেখে যায় দুষ্কৃতীরা। ভোটারদের বাড়ি থেকে বেরোতেই দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। পৌঁছন দলের নেতা সন্তোষ সিংহ। যানজট তৈরি হয়। র‌্যাফ এবং ইএফআর-সহ বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কমিশনারেটের দুই ডিসিপি অভিষেক মোদী ও জে মার্সি। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের আলোচনার মাঝেই হঠাৎ বোমাবাজি শুরু হয়। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশকে লক্ষ করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। প্রায় কুড়ি মিনিট পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিকেলে আবার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বুথ ভাঙচুরে এবং ফাঁড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। বুথের দেওয়ালে তেল ঢেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা, ফাঁড়ি থেকে রাইফেল ছিনতাই হয় বলে অভিযোগ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় দু’টি মোটরবাইকে। দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। এক জনকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে পুলিশের বড় বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খানিক পরেই ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের একটি গাড়িতে ইট ছোড়া হয়। জখম হন দু’জন।

শেষ বিকেলে অবশ্য এক দল বহিরাগতকে রুখে দেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বীরভানপুরের মানুষজন। দুষ্কৃতীদের তাঁরা তাড়া করেন। দু’টি মোটরবাইক ফেলে রেখে পালায় তারা। এক জন ধরে পড়ে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করায় দুষ্কৃতীরা পালাতে বাধ্য হয়।’’ পঙ্কজবাবুর দাবি, এ দিনের নির্বাচন বাতিল করে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে নতুন করে ভোটের দাবি জানাবেন তাঁরা। আজ, সোমবার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাবে সিপিএম। তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মিথ্যে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছে।’’

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘মোটের উপরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে কাদা রোডে পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE