Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জাফরের মৃত্যু কী ভাবে জানতে ভিসেরা পরীক্ষা

জাফরের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি— অসানসোল জেলা হাসপাতালে করা ময়না-তদন্তের রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

জাফরের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি— অসানসোল জেলা হাসপাতালে করা ময়না-তদন্তের রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জে মার্সি বলেন, “জেলা হাসপাতালের ময়না-তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই কিশোরের শরীরে কোনও ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে কী ভাবে তার মৃত্যু হল, জানতে ভিসেরা পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতার এসএসকেএমে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছি।”

তবে ওই কিশোরের মা জারিনা খাতুন ও পেশায় গ্যারাজমিস্ত্রি বাবা ইত্তেকার আনসারি বলেন, “এটা খুন ছাড়া আর কী হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না! পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে। দোষীরা সাজা পাবে।”

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি জামুড়িয়া পেট্রোল পাম্প এলাকার বাসিন্দা ১৪ বছরের কিশোর জাফর আনসারি। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারে সাহায্য করতে সে স্থানীয় একটি গ্যরাজেও কাজ করত। পুলিশ সূত্রে খবর, জামুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির পড়ুয়া জাফরের দেহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাওয়া যায় জামুড়িয়া রেল লাইনের অদূরে ব্রহ্মস্থানের কাছে ঝোপের পাশ থেকে। দেহ থেকে মাথা ও হাত আলাদা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। দেহ উদ্ধারের পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের সঙ্গে প্রথমে বচসা পরে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। বুধবার জামুড়িয়াবাজার, সব স্কুল ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে জামুড়িয়া সিনেমা হল মোড়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। সেখানে পুলিশের সামনে আসানসোল ১ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সানদার বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে পথ অবরোধ তুলতে গেলে তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে র‌্যাফ নামাতেও হয়েছিল।

পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারী ও পরিবাদের সদস্যরা। কিশোরের প্রতিবেশী সমাজসেবী বলে পরিচিত মহম্মদ ইজাজের কথায়, ‘‘দশ দিন আগে নিখোঁজ হল। তার পর বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার ও জামুড়িয়া থানা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে তার মৃতদেহের সন্ধান মিলল। অথচ পুলিশ কিছু জানতেই পারলো না! এর থেকে পরিষ্কার, প্রশাসন কতটা নিষ্ক্রিয়।’’ মৃতের দাদা নাসিম আনসারির ক্ষোভ, “আমাদের বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে গাঁজা, মদের ঠেক চলছে। প্রশাসন সব জানে।’’

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বাজার খুলেছে। অন্য দিনের মতো স্কুলে পঠন-পাঠন হয়েছে। এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তেওয়ারি মৃতের বাড়িতে এসে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন চেয়ারম্যান শেখ সানদার ও তৃমমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লকের সভাপতি সাধন রায়। পুলিশ জানায়, তদন্ত চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Viscera Test Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE