পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর ও প্রয়োজনে অন্য কর্মীদের বদলি। রুগ্ণ রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’-এর (ডিপিএল) হাল ফেরাতে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের নির্দেশিকায় এমনই প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকার কথা চাউর হতেই সংস্থা এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় কর্মীরা।
দুর্গাপুর ও লাগোয়া নানা এলাকার বিভিন্ন শিল্প-সংস্থা ও গৃহস্থালীতে বিদ্যুৎ জোগান দিতে ১৯৬০ সালে ডিপিএল তৈরি করে রাজ্য সরকার। এই মুহূর্তে ৩০০ মেগাওয়াটের সপ্তম ও ২৫০ মেগাওয়াটের অষ্টম, এই দু’টি ইউনিট চালু রয়েছে। গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। ওয়াটার ওয়ার্কস, হাসপাতাল, নিজস্ব বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থা রয়েছে সংস্থার। এ ছাড়া ছ’টি গ্রিড সাবস্টেশন, কয়লা খনি রয়েছে। তবে এক সময়ের লাভজনক কোকআভেন প্ল্যান্টটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বছর দুয়েক আগে। এই পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে বছরে গড়ে দু’শো কোটি টাকা হারে লোকসানে হচ্ছে। তা ছাড়া সুদ-আসল মিলিয়ে ঋণ বাকি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে নতুন বিদ্যুৎ আইন চালু হওয়ার পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু ডিপিএলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই কাজ করতে রাজ্য সরকার মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করে চলতি বছরে। চলতি বছর ৯ নভেম্বর মন্ত্রীগোষ্ঠী রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট দেয়। ২৭ নভেম্বর পুনর্গঠনের বিষয়টি ক্যাবিনেটে অনুমোদন পায়। রাজ্য সরকারের একশো শতাংশ শেয়ার ছিল ডিপিএলে। ডিপিএলের পুনর্গঠন প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অধীনস্থ সংস্থা হিসাবে থাকবে ডিপিএল। তা ছাড়া ডিপিএলের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা রাজ্য সরকারি সংস্থা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ দফতরের প্রধান সচিব এসকে গুপ্তের গত ৮ ডিসেম্বর জারি করা নির্দেশিকায় ডিপিএলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সংস্থার পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে সামিল হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অন্যান্য সংস্থায় যে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে, তা এখানেও কার্যকরি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানের কর্মীদের প্রয়োজনে হলে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টে বদলি এবং ওই প্ল্যান্টগুলি থেকে ডিপিএলে কর্মী নিয়ে আসার কথা বলা হয় ওই নির্দেশিকায়।
সোমবার রাতে এই নির্দেশিকা ডিপিএলে পৌঁছতেই সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মীরা। সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ডিপিএলে এই মুহূর্তে ২৭২৯ জন স্থায়ী কর্মীর বেশির ভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব। কারণ, নতুন নিয়োগ খুব বেশি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চাশোর্ধ্ব একাধিক কর্মীদের আশঙ্কা, ‘‘অনেকের ছেলের পড়াশোনা শেষ হয়নি, মেয়ের বিয়ে হয়নি। অনেকে ডিপিএলের আবাসনে থাকেন। চাকরি চলে গেলে আবাসনও তো ছেড়ে দিতে হবে।’’
স্বেচ্ছাবসরের বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও অন্ধকারে বলে জানান ডিপিএলের কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব। আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘এত বিপুল সংখ্যক কর্মী স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে কী আর্থিক প্যাকেজ পাবেন, তা স্পষ্ট নয় নির্দেশিকায়। এ ছাড়া, দেড় হাজার ঠিকা শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত। টাউনশিপ, হাসপাতালের কী হবে, তা-ও বলা হয়নি। সব জানিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।’’ ডিপিএলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy