আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি পেয়েও গত বিধানসভা ভোটের সময়ে তা কাজে লাগানো যায়নি। তার একটি কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা, অন্যটি কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত— দাবি করা হল সিপিএমের জেলা সম্মলনের রিপোর্টে।
সম্প্রতি বর্ধমান শহরে সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্মেলন হয়। সেটিরই ৭৬ পাতার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্টে বারবার উঠে এসেছে ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’র বিষয়টি। ‘বিধানসভা নির্বাচন ২০১৬’-র অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বর্ধমান জেলার ফলাফল তাদের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জেলার অধিকাংশ জায়গায় ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। ...সাধারণ ভাবে রাজ্য সরকার সম্পর্কে বিরোধিতারও পরিবেশ ছিল।’
ভোটের ফলাফল পর্যালোচনায় যে সব রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দুর্বলতা উঠে এসেছে,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে নিজস্ব কায়দায় ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও তা সিপিএম ধরতে পারেনি। এটি দলের সাংগঠনিক ঘাটতি চিহ্নিত করছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা ‘ভাল হয়নি’ বলে গোড়া থেকেই দাবি করে আসছে জেলা সিপিএম। প্রতিবেদনেও সে কথা উঠে এসেছে। জানানো হয়েছে, কালনা-বারাবনির মতো জায়গায় ওই সমঝোতার বিরোধিতা হয়েছে। গ্রামে কংগ্রেসের ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে।
দলের বন্ধ থাকা দফতর খোলার ব্যাপারেও নেতারা ‘দোদুল্যমান’, দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানে ৬৪টি কার্যালয় দখল ও ৬৮টি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বারবার আলোচনা হলেও বন্ধ থাকা দফতর খোলা যাচ্ছে না। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ‘ন যযৌ ও ন তস্থৌ’ অবস্থা পাল্টাতে হবে। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে আন্দোলন গড়ে উঠলেও তা স্রেফ ‘আনুষ্ঠানিক’ কি না, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে। বিধানসভা ভোটে ‘সন্ত্রাস’ অন্যতম বাধা ছিল দাবি করেও জানানো হয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে দলের কর্মীদের একাংশের জড়তা ও মানসিক সন্ত্রাসও কাজ করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বুথ-বাহিনী গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে সিপিএম। রাজ্য কমিটির সভায় প্রতিটি বুথে ‘টিম’ তৈরির কথা বলা হয়েছিল। পূর্ব বর্ধমানের ৪৩২৪টি বুথের মধ্যে ৩১৩০টি বুথ টিম গঠন হলেও বাস্তবে সক্রিয় রয়েছে ১৯৩২টি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গরিব মানুষের ভোটক্ষয় আটকানো যায়নি। যোগাযোগ ও সক্রিয়তার ঘাটতির জন্য গরিব মানুষের একাংশ বিজেপির দিকে চলে যাচ্ছে’। ২০১৬ সালের চেয়ে সদস্য সংখ্যাও প্রায় ৫০০ কমে গিয়েছে। জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বামেদের হাতে এখন মাত্র দু’টি। এ সবেরই কারণ হাতড়াচ্ছে জেলা সিপিএম। দলের জেলা কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy