বর্ধমানের স্কুলে শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য সৌমিত্র রায়। নিজস্ব চিত্র
জিডি বিড়লা স্কুলের ঘটনার পরে জেলার নানা স্কুলেও খুদে পড়ুয়াদের সুরক্ষার হাল পরিদশর্নে নামল রাজ্য শিশুসুরক্ষা কমিশন। মঙ্গলবার কমিশনের দুই সদস্য বর্ধমান শহরে একটি সরকারি স্কুল ও গলসির বেলগ্রামে একটি বেসরকারি স্কুল ঘুরে দেখেন। তাঁরা স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। কমিশনের অন্যতম সদস্য সৌমিত্র রায় ও শাকিলা সুলতানা শামসরা বলেন, “হঠাৎ পরিদর্শন আমরা করেই থাকি। শিশুদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও স্কুলের পরিকাঠামো দেখলাম। কলকাতা ফিরে গিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিশদ রিপোর্ট দেব।”
বর্ধমান শহরের বিসি রোডের সিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ে সকালে একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল চলে। দুপুরে চলে সরকারি প্রাথমিক স্কুল। অভিযোগ, বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের চাপে নাজেহাল অবস্থা প্রাথমিক স্কুলটির। উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮টি ঘরে নামমাত্র পড়ুয়া নিয়ে বেসরকারি স্কুলটি চলছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলটি চলছে ৮টি ছোট ঘরে। এক-একটি ঘরে ৭০-৮০ জন করে পড়ুয়াকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। কমিশনের সদস্যেরা এ দিন দেখেন, সব পড়ুয়া এক সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের একাংশকে গেটের বাইরে রেখে বাকি পড়ুয়াদের পরীক্ষা নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। সেই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে বাকিরা পরীক্ষা দিতে ঢোকে। এ ছাড়াও কমিশনের সদস্যেরা লক্ষ করেন, ফাঁকা জায়গায় অপরিচ্ছন্ন ভাবে মিড-ডে মিল রান্না হচ্ছে। ন্যূনতম খেলার জায়গা না থাকায় পড়ুয়াদের হাঁসফাঁস অবস্থা।
১৮৩৪ সালে সরকারি প্রাথমিক স্কুলটি তৈরি হয়েছিল। সেই স্কুলে এমন অবস্থা কেন? স্কুলের অন্যতম শিক্ষক অনির্বাণ ইসলাম দাবি করেন, “সিএমএস স্কুলটি ধাপে-ধাপে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক বিভাগটি অবহেলিত হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর ধরে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একাংশ ভাড়া নিয়ে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলটি তৈরি হয়েছে। তাতে আমাদের জায়গা আরও সঙ্কুচিত হয়েছে।” সর্বশিক্ষা অভিযানের জন্য টাকা এলেও খরচ করতে পারেননি প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক সুভাষ চৌধুরী বলেন, “জায়গার অভাবে সরকারি নির্দেশনামা মেনে প্রাক-প্রাথমিক বিভাগ পর্যন্ত খুলতে পারিনি।”
প্রাথমিক স্কুলের অভিভাবক-গোষ্ঠীর নেতা শেখ মানোয়ার হোসেনের প্রশ্ন, “সরকারি স্কুল কি কোনও বেসরকারি সংস্থাকে স্কুল চালানোর জন্য জায়গা দিতে পারে?” সিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহেশ্বর হেমব্রম বলেন, “এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই কোনও মন্তব্য করব না।” সব পক্ষের কথা শোনার পরে সৌমিত্রবাবু জানান, প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে।
ওই স্কুল থেকে কমিশনের সদস্যেরা যান গলসির বেলগ্রামে বেসরকারি একটি স্কুলে। সেখানে তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পড়ুয়াদের সুরক্ষা, পরিবহণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। কমিশনের সদস্যেরা অবশ্য বলেন, “কলকাতার স্কুলের ঘটনার জেরে নয়, আমরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলে আচমকা যাই। সে রকমই বর্ধমানের স্কুল দু’টি ঘুরে দেখলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy