Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
নিরাপত্তা নেই, দাবি গুসকরায়

স্বামী খুনের পরেই ভিটে ছাড়লেন স্ত্রী

স্বামী খুন হওয়ার এক দিন কাটতে না কাটতে দুই ছেলেকে নিয়ে ভিটে ছাড়লেন স্ত্রী। রবিবার দুপুরে মালবাহী গাড়িতে জিনিসপত্র নিয়ে বাপের বাড়ি ইলামবাজারের দিকে রওনা দিলেন গুসকরার শেফালি মুর্মু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা-মা ও অন্য পরিজনেরা।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শেফালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শেফালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত   ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
বর্ধমান ও গুসকরা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

স্বামী খুন হওয়ার এক দিন কাটতে না কাটতে দুই ছেলেকে নিয়ে ভিটে ছাড়লেন স্ত্রী। রবিবার দুপুরে মালবাহী গাড়িতে জিনিসপত্র নিয়ে বাপের বাড়ি ইলামবাজারের দিকে রওনা দিলেন গুসকরার শেফালি মুর্মু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা-মা ও অন্য পরিজনেরা।

পরিজনদের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় স্বামীর শেষকৃত্য হওয়ার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন শেফালিদেবী। দাঁড়ানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন। এ দিন দুপুরে ধারাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শেফালিদেবীকে গাড়িতে তুলেছেন। তারই মধ্যে কোনওমতে তাঁর অভিযোগ, “ডাইনি অপবাদ দিয়ে সম্পত্তি কাড়ার জন্য আমাদের উপরে হামলা হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে আমি বেঁচেছি। কিন্তু আমাদের বাঁচাতে গিয়ে স্বামী চলে গেল!’’ তাঁর বাবা লাল মাড্ডি বলেন, “১১ বছর আগে মেয়েকে এই বাড়িতে দিয়ে গিয়েছিলাম। এ ভাবে নিয়ে যেতে হবে ভাবিনি!”তাঁদের দাবি, নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় কার্যত বাধ্য হয়েই শেফালি ও তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে।

শনিবার ভোরে ধারাপাড়ায় বাড়ির কাছেই মেলে বছর চল্লিশের শিবু মুর্মুর দেহ। তাঁর স্ত্রী শেফালিদেবী অভিযোগ করেন, ডাইন অপবাদ দিয়ে তাঁকে তাড়া করেছিলেন দুই দেওর-সহ ৯ জন। তাঁকে বাঁচাতে গেলে পিটিয়ে খুন করা হয় স্বামীকে। পুলিশ ঘটনার পরেই মৃতের ভাই সুফল মুর্মুকে গ্রেফতার করে। পরে আরও এক ভাই হেপনা মুর্মু-সহ তিন জনকে ধরা হয়। ধৃতদের রবিবার বর্ধমানের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে সুফল-সহ দু’জনকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। বাকি দু’জনকে ১১ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ভিটে থেকে উচ্ছেদের জন্যেই দাদার পরিবারের উপরে হামলা চালায় দুই ভাই। পুলিশের দাবি, এ দিন আদালতে সুফল জানিয়েছে, রাগের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। কিন্তু দাদা মারা যাবেন, তাঁরা ভাবতে পারেননি।

পুলিশ জানায়, এক-দেড় কাঠা জমিতে তিন কুঠুরির বাড়িতে তিন ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন। ওই ভিটের দখল নিয়েই অশান্তি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, মাসখানেক আগে থেকে সম্পত্তি নিয়ে গোলমাল শুরু হয়। তা মেটাতে ধর্মরাজতলায় সালিশির আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুকল মাড্ডির অভিযোগ, “ওই সভার পরেই শিবুর পরিবারকে ডাইন অপবাদ দিতে থাকে তাঁর ভাইয়েরা। যদিও আমরা এ সব মানি না, তা স্পষ্ট ভাবে ওই পরিবারকে বলা হয়েছিল। সে জন্য পাড়ার কেউ ওদের ব্যাপারে নাক গলাননি।”

অভিযুক্তদের ঘরেও এখন তালা। নিরাপত্তার অভাবের কথা অবশ্য মানতে নারাজ স্থানীয় প্রশাসন থেকে পড়শিরা। প্রতিবেশী রবিন হেমব্রমের বক্তব্য, “সৎকারে পাড়ার লোকেরা হাজির ছিলেন। কিন্তু শেফালিদেবীকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। বাপের বাড়ির লোকজন নিয়ে গেলে আমাদের কী বলার আছে?” এলাকার সিপিএম কাউন্সিলর বিকাশ বাগদি, তৃণমূলের পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়েরা বলেন, “কয়েক দিন বাপের বাড়িতে থাকলে শেফালিদেবীর মন ভাল হবে। সে জন্যই সম্ভবত তিনি যাচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE