Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জীবনের গল্প শুনিয়ে বিয়ে রোখে সনোদি

অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার বিপদ কত, নিজের জীবন দিয়েই বুঝেছে সে। আর কেউ যাতে সে পথে না যায়, তা বোঝাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আগে নিজের উদাহরণই দেয় আউশগ্রামের ঝাড়গোড়িয়ার সনোদি হেমব্রম।

একমনে: পড়ায় ব্যস্ত সনোদি হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র

একমনে: পড়ায় ব্যস্ত সনোদি হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার বিপদ কত, নিজের জীবন দিয়েই বুঝেছে সে। আর কেউ যাতে সে পথে না যায়, তা বোঝাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আগে নিজের উদাহরণই দেয় আউশগ্রামের ঝাড়গোড়িয়ার সনোদি হেমব্রম। বুঝিয়ে বলে নাবালিকা বিয়ের কুফল। তাঁর কাজকে কুর্নিশ জানিয়ে বাংলা অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রীকে আজ, বুধবার নারী দিবসে সংবর্ধনা দেবে ব্লক প্রশাসন।

মাধ্যমিক পাশ করার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সনোদির। কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনাও। তখনই মনে প্রশ্ন জাগে এ ভাবেই কি চলবে? তা হলে অতটুকু পড়াশোনাই বা কেন? দাঁতে দাঁতে চেপে ফের শুরু হয় পড়াশোনা। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সুশীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এখন গুসকরা কলেজে বাংলায় অনার্স, দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সে। এখন নিজের উদাহরণই সামনে এনে পড়শি মেয়েদের প্রেরণা জোগায় সে। পড়তে বলে, খোলা হাওয়ায় বাঁচতে বলে, স্বপ্ন দেখায়।

কাজও হয়েছে। প্রশাসন সূত্রেই জানা গেল, এখন ওই গ্রামে এমন কোনও মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পড়াশোনা করে না। এক গ্রামবাসীর আবার দাবি, ‘‘গ্রামে তো ছেলেদের থেকে মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহ বেশি। সবই ওই সনোদির জন্যে। মেয়েটা বড় ভাল।’’

সনোদির উপলব্ধি, “মনের তাগিদ থাকলে সব করা যায়। মেয়েদের পড়াশোনা শেখাটা খুব জরুরি। ছেলেরা পারলে মেয়েরা পারবে না কেন?’’ পড়াশোনার ফাঁকে মাঠেও যায় সে। শুধু অল্প বয়সে বিয়ে নয়, সঠিক পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কেও প্রতিবেশি মেয়েদের সে বোঝায় সে। বলে সময় বুঝে সন্তানের পরিকল্পনা করা উচিত। নয়তো শুধু সন্তান নয়, গোটা পরিবারই বিপদে পড়বে। আদিবাসী সমাজের মধ্যে কোনও কুসংস্কার চোখে পড়লেই বুঝিয়ে সচেতন করতে চায়। আক্ষেপের সঙ্গেই জানায়, অল্প বয়সে বিয়ে করায় কন্যাশ্রীর টাকা না পাওয়ার কথা। সনোদি যখন স্কুলে পড়ত তখন সবুজসাথী প্রকল্পও চালু ছিল না। তবে স্টাইপেন্ডের টাকায় নতুন সাইকেল কিনেছে সে। তাতে চড়েই কলেজ যায়।

আরও পড়ুন: আলিয়া ছাড়া আমি অন্য কারও ছবি দেখি না

এই লড়াইটা সহজ ছিল না। তবে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে পাশে পাওয়ায় সমস্যা হয়নি। স্বামী অর্জুন বেসরা নিজে মাধ্যমিক পাশ করেননি। তাই বলে স্ত্রী-র পড়াশোনার উৎসাহে বাদ সাধেননি। বরং উৎসাহ দিয়েছেন। স্ত্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে অল্প বয়সের বিয়ের কুফল বুঝিয়ে বলে, পড়তে বলে— এ সবই জানা তাঁর। অর্জুনের কথায়, ‘‘ও তো সবার ভালর জন্যেই করছে। প্রশাসনও সেটা বুঝেছে।’’

আউশগ্রাম ১ এর বিডিও চিত্তজিত বসু বলেন, ‘‘মেয়েটির জীবন সংগ্রাম এবং ওর আদিবাসী সমাজের অন্য মেয়েদের পাশে থাকার এই ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে নারী দিবসে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ তা শুনে লাজুক হেসে সনোদি বলছে, “এটা আমাকে উৎসাহ দেবে ঠিকই। তা বলে কাজটা বন্ধ করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women's Day Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE