Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মনোনয়ন দিতে কেউ এলেন ট্রেনে, কেউ হেঁটে

কেউ জেলাশাসকের অফিসে সপার্ষদ হেঁটে এলেন কিছুটা দূর থেকে। কেউ এলেন লোকাল ট্রেনে, কেউ বা গাড়িতে। রাজ্যে প্রথম পর্বের লোকসভা ভোটের দিন, বৃহস্পতিবার থেকেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হল দুই ২৪ পরগনায়। প্রথম দিন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়, ওই কেন্দ্রেরই কংগ্রেস প্রার্থী ধনঞ্জয় (শক্তি) মৈত্র এবং বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কে ডি বিশ্বাস মনোনয়ন জমা দিলেন।

মনোনয়ন জমা দিতে বনগাঁ থেকে ট্রেনেই রওনা দিলেন বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

মনোনয়ন জমা দিতে বনগাঁ থেকে ট্রেনেই রওনা দিলেন বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

কেউ জেলাশাসকের অফিসে সপার্ষদ হেঁটে এলেন কিছুটা দূর থেকে। কেউ এলেন লোকাল ট্রেনে, কেউ বা গাড়িতে।

রাজ্যে প্রথম পর্বের লোকসভা ভোটের দিন, বৃহস্পতিবার থেকেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হল দুই ২৪ পরগনায়। প্রথম দিন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়, ওই কেন্দ্রেরই কংগ্রেস প্রার্থী ধনঞ্জয় (শক্তি) মৈত্র এবং বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কে ডি বিশ্বাস মনোনয়ন জমা দিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মনোনয়ন জমা দিলেন মাত্র দু’জন। মথুরাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল এবং জয়নগর কেন্দ্রের এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল।

তবে, ছয় প্রার্থীর মধ্যে পুরোপুরি উৎসবের মেজাজে হাজির ছিলেন কেডি বিশ্বাস। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, সাদা চটি, গলায় উত্তরীয় পরে নিত্যযাত্রীদের মতো বনগাঁ স্টেশনে এসে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে বারাসতে গেলেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী। সঙ্গে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। যাঁদের অধিকাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের। মুখে তাঁদের ‘হরিবোল’। হাতে নিশান। ট্রেনের কামরায় বাজল ডঙ্কা, কাঁসি। ট্রেনের কামরা এবং তার আগে প্ল্যাটফর্মেই সেরে নিলেন একপ্রস্ত প্রচার। জেলাশাসকের দফতরে তিনি যখন মনোনয়ন দিতে যান, তখন বাইরে কর্মী-সমর্থকদের প্রবল উল্লাস। সঙ্গে স্লোগান, ‘দিল্লিতে মোদী, বনগাঁয় কেডি’।

মনোনয়ন পেশের পরে বেরিয়ে এসে কে ডি বলেন, “লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল সাড়া পেয়েছি। মতুয়ারা আমারই পাশে আছেন।” আর এ ভাবে ট্রেনে করে আসা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বহু সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে আসতে চেয়েছিলেন। তাঁদের পক্ষে গাড়ি করে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, ট্রেনে জনসংযোগও করা গেল।”

শেষ মুহূর্তে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল (বাঁদিকে)।
মনোনয়ন জমা দিলেন তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

বারাসতের শেঠপুকুর মাঠে সকাল থেকেই জড়ো হচ্ছিলেন কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাঁদের নিয়ে মিছিল করে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে এসে কাকলিদেবী যখন জেলাশাসকের দফতরে ঢুকছেন, তখন বেলা ১২টা। অল্প সময়ের মধ্যেই মনোনয়ন জমা দেন কাকলিদেবী। বেরিয়ে তিনি বলেন, “গত বার মানুষ আমাকে প্রচুর ভোটে জিতিয়ে সাংসদ করেছিলেন। পাঁচ বছরে আমি সাধ্যমতো উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এ বারও মানুষ আমাকে প্রচুর ভোটে জেতাবেন, সে বিশ্বাস আছে।”

কাকলিদেবী থাকাকালীনই জেলাশাসকের অফিসে চলে আসেন দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং দলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ। আগেই জেলাশাসকের অফিসে পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, রথীন ঘোষের মতো নেতারা। ওই কেন্দ্রের বামপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়াকে কটাক্ষ করে সৌগতবাবু বলেন, “সিপিএমের কোনও গুরুত্ব নেই। অসীমবাবু লোকসভার জন্য চেষ্টা করছেন। আগে মাধ্যমিক পাশ করতে হয়। না হলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় না।”

এ দিন উত্তর ২৪ পরগনায় সব শেষে মনোনয়ন পেশ করেন দমদমের কংগ্রেস প্রার্থী ধনঞ্জয় (শক্তি) মৈত্র। শ’খানেক কর্মী-সমর্থককে নিয়ে তিনি আসেন গাড়িতে। মনোনয়ন পেশ করার সময়ে সংশ্লিষ্ট তথ্যে কিছু ত্রুটি থাকায় সংশোধন করে দিতে দেরি হয়। শক্তিবাবুর অভিযোগ, “প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়নের সময়ে জেলাশাসকের অফিসে তিন জনের বেশি ঢুকতে পারেন না। কিন্তু শাসক দলের প্রার্থীরা প্রচুর লোকজন নিয়ে ঢোকেন। দলের পতাকা লাগানো গাড়িও জেলাশাসকের অফিস চত্বরে ঢোকে। এ নিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেন খাদ্যমন্ত্রী।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা প্রশাসনের অফিসের সিসি টিভির ফুটেজে কোনও দলেরই সে রকম আপত্তিকর কোনও কিছু ধরা পড়েনি। সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, এ দিন থেকে সমস্ত প্রার্থীর অর্থনৈতিক লেনদেনের দিকে নজরদারি শুরু হল। প্রার্থী কত টাকা খরচ করছেন, কোন গাড়ি চড়ছেন এ সব ব্যাপারও দেখা হবে। কোন বুথগুলি অধিক উত্তেজনা প্রবণ তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরে জয়নগরের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল যখন এসে পৌঁছলেন তখন বেলা ১১টা। প্রায় একই সময়ে পৌঁছন ওই কেন্দ্রেরই এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল। গত বার দুই দলের জোট ছিল। এ বার তারা প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু মনোনয়ন পেশের সময়ে দুই প্রার্থীই পরস্পরের প্রতি সৌজন্য দেখালেন। মনোনয়ন জমা দিয়ে প্রতিমাদেবী বলেন, “এ বার নিশ্চিন্তে প্রচার অভিযানে নেমে পড়ব।” আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বলেন, “নির্বাচনে লড়াই তো রয়েছেই। ওটা রাজনৈতিক। রাজনীতির বাইরে ও আমার প্রতিপক্ষ নয়, বন্ধু।” মুচকি হাসেন প্রতিমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nomination lok sabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE