Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হুগলি জেলার সব পুকুরেই মাছ চাষে উদ্যোগী প্রশাসন

নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদি জলাশয় বাদ দিলে হুগলিতে শুধু পুকুরের সংখ্যাই দেড় লক্ষের উপর। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার পুকুরে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। এই তথ্য জেলা মৎস্য দফতরেরই। জেলায় মাছ চাষে এই দশা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছেন মৎস্য দফতরের কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৭:২১
Share: Save:

নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদি জলাশয় বাদ দিলে হুগলিতে শুধু পুকুরের সংখ্যাই দেড় লক্ষের উপর। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার পুকুরে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। এই তথ্য জেলা মৎস্য দফতরেরই। জেলায় মাছ চাষে এই দশা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছেন মৎস্য দফতরের কর্তারা। সামাজিক মাছ চাষ প্রকল্প-সহ নানা ক্ষেত্রে চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা সহ-মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎকুমার সাহা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দফতরটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, একটি পুকুরও ফেলে রাখা যাবে না। মাছ চাষ করতে হবে। আমরা আশার আলো দেখছি। জেলার বিভিন্ন ব্লক এবং পুরসভা এলাকায় জোরকদমে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিকঠাক চললে আগামী দু’ বছরের মধ্যে জেলায় মাছের প্রাচুর্য ঘটবে।”

জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার নতুন উদ্যমে জোর দেওয়া হয়েছে সামাজিক মাছ চাষ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে স্কুল-কলেজ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের পুকুরে মাছ চাষের জন্য অনুদান দেওয়ার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। উৎসাহ হারিয়ে ফেলা চাষিদের ফের উৎসাহী করে তুলতেও একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে, মাছচাষিদের জন্য গৃহ নির্মাণ, মাছ নিয়ে যাওয়ার বাক্স দেওয়া, সাইকেল বিলি ইত্যাদি। ব্লক স্তরে ২০ জন করে মৎস্যজীবীর জন্য ১০ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছে। প্রতিদিন তাঁরা ২৫০ টাকা করে ভাতা পাবেন। ব্লক স্তরের পর জেলা স্তরেও তিন জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁদেরও প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। ছোট মাছ (পুঁটি, কই ইত্যাদি) চাষেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী দফতরটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন,
একটি পুকুরও ফেলে রাখা যাবে না। মাছ চাষ করতে হবে। জেলার বিভিন্ন ব্লক
এবং পুরসভা এলাকায় জোরকদমে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিকঠাক চললে
আগামী দু’ বছরের মধ্যে জেলায় মাছের প্রাচুর্য ঘটবে।
অভিজিৎকুমার সাহা
(হুগলি জেলা সহ-মৎস্য অধিকর্তা)

• গৃহ নির্মাণ, মাছ নিয়ে যাওয়ার বাক্স দেওয়া, সাইকেল বিলি হবে।
• ব্লক স্তরে ২০ জন করে মৎস্যজীবীর জন্য ১০ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিন তাঁরা ২৫০ টাকা করে ভাতা পাবেন।
• ব্লক স্তরের পর জেলা স্তরেও তিন জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁদেরও প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।
• ছোট মাছ চাষেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

মৎস্য দফতরের খাতায়-কলমে জেলায় মোট মাছ-চাষির সংখ্যা ১ লক্ষ ১২ হাজার ৫৯৩। জেলায় মাছ উৎপাদন বিঘাপিছু প্রায় ১০০ কেজি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা সহ-মৎস্য অধিকর্তা বলেন, “এত দিন এক বিঘার জলাশয় থেকে বছরে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কিলো মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ বার অন্তত ৫০০ কেজি উৎপাদনের জন্য ঝাঁপানো হচ্ছে। সমস্ত স্তরের কর্মীদের বিশেষ তৎপরতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু এই জেলায় ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ওই দফতরের গাফিলতির জন্যই এত দিন মাছ চাষ অবহেলিত হচ্ছিল, এই অভিযোগ চাষিদের দীর্ঘদিনের। ঠারেঠোরে কয়েকটি ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিকেরা সে কথা মেনে নিয়ে জানিয়েছেন, মাছ চাষ বাড়ানোর প্রকল্প অনেক থাকলেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না মেলায় সমস্যা হয়। বিভিন্ন ব্লক থেকে যত পরিমাণ পুকুরে মাছ চাষের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়, তার থেকে অনুমোদন মেলে নামমাত্র। আবার মাছ-চাষিদের হাঁড়ি, জাল দেওয়ার সহায়তা প্রকল্পে ১০০০ উপভোক্তার নাম পাঠানো হলে মাত্র ১৬-১৭ জনের নাম অনুমোদিত হওয়ার নজিরও রয়েছে। একই রকম ভাবে সামাজিক মাছ চাষ প্রকল্প, মিনিকিট বিতরণ প্রকল্প, মৎস্যজীবী পরিবারের ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান এমনকী, ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পটিও গতি পাচ্ছে না।

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সহ-মৎস্য অধিকর্তা জানান, যেমন টাকা পাওয়া যায়, সেই মতো প্রকল্প রূপায়ণ হয়। তবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য ‘জল ভরো, জল ভরো’ প্রকল্পে সংস্কার হওয়া পুকুরের তালিকা সব সময়ে নির্দিষ্ট ভাবে না মেলায় প্রকল্পটিতে বিলম্ব হচ্ছিল ঠিকই, তবে এ বার তাতে গতি এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pisciculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE