Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ বার জয়পুরে পুলিশকে ইট

একটি ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল করা নিয়ে একই পরিবারের দু’পক্ষের গোলমালে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে গত জানুয়ারিতে শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামে প্রহৃত হন ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টর।

চিহ্ন: পুলিশের লাঠি ও জুতো হাতে স্থানীয় বালক। নিজস্ব চিত্র

চিহ্ন: পুলিশের লাঠি ও জুতো হাতে স্থানীয় বালক। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

গ্রামীণ হাওড়ায় পুলিশের উপরে হামলা ক্রমশ বাড়ছে। শ্যামপুর, আমতার পরে এ বার জয়পুরের গ্রামেও আক্রান্ত হল পুলিশ।

মাটির দাবিতে মঙ্গলবার রাতে জয়পুরের সেহাগড়ি উত্তর মুসলিম পাড়ায় এক ঠিকাদারের মাটির লরি আটকে দিয়েছিলেন কিছু গ্রামবাসী। ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের গোলমাল থামাতে গিয়েই পুলিশ আক্রান্ত হয়। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে জখম হন জয়পুর থানার এএসআই শঙ্কর পাঁজা এবং পার্থপ্রতিম দাস ও স্বপন সিংহ নামে দুই কনস্টবল। তাঁদের জয়পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ওই রাতেই তল্লাশি চালিয়ে এক মহিলা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তল্লাশির নামে পুলিশ বাড়ি বাড়ি নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগও তুলেছেন গ্রামবাসী।

একটি ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল করা নিয়ে একই পরিবারের দু’পক্ষের গোলমালে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে গত জানুয়ারিতে শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামে প্রহৃত হন ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টর। চলতি মাসের গোড়াতেই আমতার শাহচক গ্রামে একটি মারধরের মামলায় অভিযুক্তকে ধরতে গিয়ে মার খেতে হয়েছিল এক সাব-ইন্সপেক্টরকে। এ বার জয়পুরে ইট!

আগের দু’টি ক্ষেত্রে অভিযানে যাওয়ার আগে আগাম তথ্যের ব্যাপারে পুলিশি ‘নেটওয়ার্ক’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন এ বারেও উঠেছে। তবে, এ বার ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিতে রাজি হননি হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা। তাঁর দাবি, ‘‘এমন কিছু বড় ঘটনা নয়। রাতের অন্ধকারে কয়েক জন ইট ছুড়েছিল। তাতে দু’এক জন পুলিশকর্মী সামান্য জখম হয়েছেন।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে সেচ দফতরের উদ্যোগে জয়পুরের বাকসি থেকে থলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১১.৬৫ কিমি শর্টকার্ট খাল সংস্কারের কাজ চলছে। খালের মাটি ঠিকাদারদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। সেহাগড়ি উত্তর মুসলিম পাড়ার বাসিন্দারা একটি নিচু জায়গা উঁচু করার জন্য ঠিকাদারের কাছে মাটি চেয়েছিলেন। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চেয়েও মাটি না-পাওয়ায় গত সোমবার গ্রামবাসীরা ঠিকাদারের পাঁচ লরি মাটি জোর করে নামিয়ে নেন। অশান্তি এড়াতে ঠিকাদার এর পরে তাঁদের মঙ্গলবার ৫০ গাড়ি মাটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বলে গ্রামবাসীদের দাবি। কিন্তু সেই মাটি না-মেলায় রাতে গ্রামবাসীরা ফের মাটির লরি আটকান। ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ গোলমাল থামাতে যায়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রথমে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তার পরে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। আক্রান্ত হয়ে পুলিশ পিছু হটে। তার পরে এসডিপিও (উলুবেড়িয়া) রানা মুখোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। যায় র‌্যাফও। ধৃত শেখ হারুন, শেখ রসিদ, শেখ মানা এবং জহুরা বিবিকে বুধবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক মহিলাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত এবং বাকিদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

বুধবার ওই গ্রামে গেলে বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। শেখ রহিম নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ঠিকাদার মাটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও ঘোরাচ্ছিলেন। তাই গ্রামবাসীরা রেগে গিয়ে কয়েকটি লরি থেকে মাটি নামিয়ে নেন। ঠিকাদারের লোকজন আমাদের মারধর করেছে। কিন্তু পুলিশ বাড়িতে ঢুকে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে।’’ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা হামলার অভিযোগ মানেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Police Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE