Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
বন্ধ চিকিৎসা, হয় না ক্যানসার নির্ণয়ও

হাসপাতাল ফিরুক, চাইছে চন্দননগর

এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারা চাইছেন নতুন করে বাঁচিয়ে তোলা হোক হাসপাতালটিকে। এ জন্য নাগরিক সম্মেলনও করেছেন তাঁরা। যে পরিবারের দেওয়া জমিতে তৈরি হয়েছিল ওই হাসপাতাল তাঁরাও চাইছেন নতুন করে কিছু হোক।

জনমানবশূন্য: বেহাল ক্যানসার হাসপাতাল। ছবি: তাপস ঘোষ

জনমানবশূন্য: বেহাল ক্যানসার হাসপাতাল। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:৩১
Share: Save:

বিরাট চত্বরে একা দাঁড়িয়ে একটি বাড়ি। এক সময় ছিল হাসপাতাল। ভর্তি থাকতেন রোগী। ছোটখাট হাসপাতাল নয়। রীতিমতো ক্যানসার হাসপাতাল ছিল চন্দননগরের বুকে। ক্রমশ তা পরিত্যক্ত হয়েছে।

মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের নাগালের একমাত্র ভরসা কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার। এমন পরিস্থিতিতে কার্যত পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে চন্দননগরের চিত্তরঞ্জন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের শাখাটি। অথচ, ওই শাখার জন্য চিকিৎসক, নার্স-সহ সাতটি পদ এখনও বহাল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারা চাইছেন নতুন করে বাঁচিয়ে তোলা হোক হাসপাতালটিকে। এ জন্য নাগরিক সম্মেলনও করেছেন তাঁরা। যে পরিবারের দেওয়া জমিতে তৈরি হয়েছিল ওই হাসপাতাল তাঁরাও চাইছেন নতুন করে কিছু হোক।

১৯৬৫ সালে চন্দননগরের বাসিন্দা শিবশঙ্কর নন্দী তাঁর বাবা রূপলাল নন্দীর স্মরণে হাসপাতলের জন্য এক বিঘেরও বেশি জমি দান করেছিলেন। ২০ শয্যার ওই ক্যানসার হাসপাতালটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুশীলা নায়ার। সে সময় হাসপাতালে চিকিৎসা চলত ভালই। চিকিৎসক, নার্স ছিলেন। বহু রোগী আসতেন আশপাশের জেলা থেকেও। কাউকে চিকিৎসা করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। আবার অনেককেই পাঠিয়ে দেওয়া হত কলকাতায়। রোগীদের ওষুধও দেওয়া হত হাসপাতাল থেকে।

পরবর্তী কালে ন’য়ের দশক থেকেই হাসপাতালের পরিধি ছোট হতে শুরু করে। বন্ধ হয়ে যায় ওষুধ দেওয়া। এক সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় রোগী ভর্তি নেওয়াও। রোগ নির্ণয় কেন্দ্র হিসেবে চালু ছিল হাসপাতালটি। ডাক্তারি পরীক্ষার পর রোগীদের ক্যানসার নির্ণয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলে তাঁদের কলকাতায় চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হত। এখন সে কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ক্যানসারের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় খুব জরুরি। আগেই রোগ নির্ণয় হলে অনেক সময়ই প্রাণে বেঁচে যান রোগীরা। ঘরের কাছে হাসপাতাল থাকলে রোগীদের সুবিধা হত। নিদেন পক্ষে রোগ নির্ণয়টা নির্ভুল ভাবে হলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন মানুষ।

বিরক্ত জমিদাতা পরিবারও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল যদি চালু না থাকে, রোগীরা সুরাহা না পান, তবে ফিরিয়ে দেওয়া হোক আমাদের জমি।’’

পরিবেশবিদ চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি হাসপাতালের নথি ঘেঁটে দেখেছি, চন্দননগরে এখনও ক্যানসার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক, নার্স-সহ সাতটি পদ রয়েছে। সম্ভবত তাঁরা কলকাতায় চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে বসেন। তা হলে এখানে নয় কেন?’’ তাঁর দাবি, ক্যানসারের চিকিৎসা কেন্দ্র রাজ্যেই বিশেষ নেই। মানুষের প্রয়োজন যে হেতু রয়েছে বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে ভাবনা-চিন্তা করা যেতেই পারে।

এই বিষয়ে চন্দননগর পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থ দত্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ওই হাসপাতালটি ফের চালুর লক্ষ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে প্রতিকারের চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chittaranjan National Cancer Institute Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE