বিতর্ক: এই বল বিলি নিয়েই উঠেছে নানা অভিযোগ। ফাইল চিত্র
রাজ্য ফুটবলের প্রসার ঘটাতে অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন জেলায় জেলায় হাইস্কুল, কলেজ, হাই মাদ্রাসা ও ক্লাবগুলিকে ৫টি করে ফুটবল দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু ‘খেলাশ্রী’ নামে ওই প্রকল্পে ফুটবল প্রাপক ক্লাব ও স্কুলের তালিকা নিয়ে হাওড়া ও হুগলি দুই জেলাতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন হয় এমন অনেক ক্লাব এবং স্কুল ফুটবল পায়নি। আবার এমন কিছু ক্লাব বা স্কুল ফুটবল পেয়েছে যাদের সঙ্গে ফুটবলের সম্পর্ক নেই বললেই চলে।
উলুবেড়িয়া মিলন সঙ্ঘের সম্পাদক সৈকত দাসের অভিযোগ, ‘‘আমরা সারা বছর ফুটবল শেখাই। খেলাশ্রীর মঞ্চে আমাদের বল দেওয়া হলেও পরে ফেরত নিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ অঙ্কুরহাটি পিএজে স্পোর্টিং ক্লাব এই মরসুমে কলকাতা নার্সারি লিগে খেলেছে। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি এলাকায় ফুটবলের প্রসারের জন্য নিজেদের টাকায় স্টেডিয়াম তৈরি করেছে। কিন্তু তারাও ফুটবল পায়নি। ক্লাবের সম্পাদক তথা মহিয়াড়ি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মমতাজ মোল্লার ক্ষোভ, ‘‘স্থানীয় স্তরে ফুটবলের প্রসারে আমাদের ক্লাবের অবদান জেলার মানুষ জানেন। কিন্তু খেলাশ্রীর তালিকায় আমাদের নাম ছিল না।’’
ডোমজুড় পার্বতীপুর মিলন সঙ্ঘ স্থানীয় থানা লিগে খেলে। কিন্তু তারাও ফুটবল পায়নি। ক্লাবের সম্পাদক তথা ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘খেলাশ্রীর ফুটবল বণ্টনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের একাংশ পক্ষপাতিত্ব করেছেন।’’ মাকড়দহ আমরা নতুনের সম্পাদক রুদ্র শ্রীমানী জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে তাদের মাঠে প্রায় ৮০ জন ফুটবল অনুশীলন করে। তাদের মধ্যে মেয়েরাও রয়েছে। কিন্তু ‘খেলাশ্রী’র ফুটবল তারা পাননি। একই অভিযোগ করেছে উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি স্পোর্টিং ক্লাব, সনাতন স্পোর্টিং ক্লাব ও উলুবেড়িয়া শুভময় ক্লাব-সহ দুই জেলার আরও অনেক ক্লাব।
নিজস্ব মাঠ ও পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও ফুটবল পায়নি এরকম ক্লাব যেমন রয়েছে, তেমনই এমন কিছু ক্লাবের খোঁজ মিলেছে যাদের কর্তারা খেলাশ্রীর ফুটবল নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন। যেমন উলুবেড়িয়া নবোদয় সঙ্ঘ। তাদের খেলার মাঠ নেই। ক্লাব সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকারের কথায়, ‘‘বল দিয়েছে তাই নিয়েছি।’’ উলুবেড়িয়া নোনা অ্যাথলেটিক ক্লাবের সম্পাদক পবিত্র সান্যাল বলেন, ‘‘ফুটবল পেয়েছি। কিন্তু সেগুলি নিয়ে কী করবো জানি না।’’ ডোমজুড় সংলগ্ন একটি ক্লাবের কর্তারা আবার জানিয়েছেন, ঠিকঠাক দাম পেলে তারা ‘খেলাশ্রী’তে পাওয়া ফুটবল বিক্রি করে দেবেন!
দুই জেলায় এরকম অনেক মেয়েদের স্কুল ফুটবল পেয়েছে যারা ফুটবল কোনওদিন খেলেনি। ভবিষ্যতে খেলবে এমন পরিকল্পনাও নেই। আবার হাওড়া দেশবন্ধু বয়েজ, ডোমজুড়ের দুর্লভচন্দ্র বিদ্যাপীঠের মতো দুই জেলায় এমন কয়েকটি ছেলেদের স্কুল রয়েছে যারা নিয়মিত ফুটবল খেললেও বল প্রাপকদের তালিকায় তাদের নাম ছিল না।
খানাকুল কৃষ্ণভামিনী বালিকা বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক রিঙ্কু দে পাল জানান, তাদের স্কুলের নিজস্ব মাঠ নেই। ফুটবল নিয়ে কী হবে এখনও ভাবা হয়নি। খানাকুলের হেলান সারদামনী বালিকা বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠ থাকলেও সেখানে ফুটবলের অনুশীলন হয় না। গোঘাটের ভগবতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৈয়েবুন্নেশা বেগম জানান, ছাত্রীদের ফুটবল খেলার বিষয় নিয়ে পরিচালন কমিটি এবং অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। আরামবাগ গার্লস হাইস্কুল-সহ একাধিক মেয়েদের স্কুলের আবার প্রশ্ন, ফুটবলগুলি তারা কাজে লাগাতে চান। কিন্তু খেলাটা শেখাবে কে?
দুই জেলা প্রশাসনের কর্তারাই এর দায় নিতে নারাজ। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, বল প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে যুব দফতর। আবার যুব দফতরের দাবি, জেলা পুলিশের পরামর্শ নিয়েই মূল তালিকা তৈরি হয়েছে। জেলার কয়েকটি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের কাছে জেলা যুব দফতর থেকে ক্লাব ও স্কুলের তালিকা পাঠিয়ে সেগুলির বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই তালিকা কারা তৈরি করেছিল সেটা তাদের জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাওড়া ও হুগলি দুই জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তা মেনে নিয়েছেন, সঠিক সমন্বয়ের অভাবেই এই ঘটনা ঘটেছে। সমস্যা মেটানার চেষ্টা চলছে।
(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত জানা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy