দেবরাজ। নিজস্ব চিত্র
ব্যাঙ্কের তুলনায় বেশি সুদ মিলবে, এই প্রলোভনে একটি ভুয়ো লগ্নি সংস্থায় ৯১ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন এক বৃদ্ধ। সেই টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ওই সংস্থার কর্ণধার ও তাঁর স্ত্রীকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করল শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম দেবরাজ দাশগুপ্ত এবং রেশমা চহ্বাণ ওরফে রিয়া দাশগুপ্ত। দেবরাজ ‘শিবম গ্রুপ অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংস্থা খুলেছিলেন। সঞ্জয় ভট্টাচার্য নামে প্রতারিত ওই বৃদ্ধ শ্রীরামপুর হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রথম দিকে বৃদ্ধের জমানো টাকা বেশি সুদ-সহ ফেরত দেন দেবরাজ। তার পরেই বেপাত্তা হয়ে যান। আর কেউ প্রতারিত হয়েছেন কিনা, দেখা হচ্ছে।’’
সারদা-কাণ্ড সামনে আসার পর থেকে বেশি সুদের লোভে কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থায় সাধারণ মানুষ যাতে টাকা না-রাখেন, সে ব্যাপারে সরকারি স্তরে নানা ভাবে প্রচার চলছেই। তা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে যে ওই সব সংস্থায় টাকা রাখার প্রবণতা রোখা যায়নি, তা মানছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা।
পুলিশ জানায়, দেবরাজ আদতে বাঁকুড়ার খাতরার বাসিন্দা। স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার তেঘরিয়ায় ভাড়া থাকতেন। স্ত্রী স্বামীর সংস্থায় সহযোগীর কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে তাঁদের সঙ্গে সঞ্জয়বাবুর যোগাযোগ হয়। ওই সংস্থায় কয়েক দফায় বৃদ্ধ প্রায় ৯১ লক্ষ টাকা জমা রাখেন। দেবরাজ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে বৃদ্ধ বুঝতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিনি শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তকারীরা জানান, তেঘরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, দম্পতি বেপাত্তা। ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালার কাছে জমা রাখা প্যান কার্ডের সূত্রে দেবরাজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বের করেও লাভ হয়নি। শেষে ফেসবুক থেকে দেবরাজের মোবাইল নম্বরের সূত্রে তাঁর দিল্লির যোগ পান। জামশেদপুরে দেবরাজদের অফিস রয়েছে। সেখান থেকে দেবরাজের আর একটি মোবাইল নম্বর মেলে। জানা যায়, দেবরাজ আছেন দিল্লির রোহিনীতে। শ্রীরামপুর থানার পুলিশের একটি দল রোহিনীতে হানা দেয়।
গত ১৭ জানুয়ারি ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানকার আদালত থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে শনিবার পুলিশ ধৃতদের নিয়ে শ্রীরামপুরে পৌঁছয়। রবিবার শ্রীরামপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম রোহিনী রাইয়ের এজলাসে হাজির করানো হলে বিচারক দেবরাজকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজত এবং রেশমাকে ১৪ দিন জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। অভিযোগ মানতে চাননি দেবরাজ। তাঁর দাবি, ‘‘শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটিয়েছিলাম। বৃদ্ধকে সব টাকা দিয়ে দিয়েছি। তার প্রমাণও আছে।’’
পুলিশ বৃদ্ধের টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ জানায়, দম্পতির বাড়িতে টাকা মেলেনি। টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলার পাশাপাশি চোস্ত হিন্দি বলতে পারে দেবরাজ। দিল্লি, জামশেদপুর প্লেনে যাতায়াত করতেন। তাঁর চলন-বলনে বৃদ্ধ বোকা বনে যান। সঞ্জয়বাবু বা তাঁর ছেলে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy