Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ের প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে খুন প্রৌঢ়

সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে খানিক দূরে একটি কারখানার পরিত্যক্ত আবাসনের শৌচাগারের চেম্বার থেকে উদ্ধার হল বিশ্বনাথ দাস (৫৪) নামে ওই প্রৌঢ়ের দেহ।

সন্ধান: অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার। নিহত বিশ্বনাথ দাস (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র

সন্ধান: অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার। নিহত বিশ্বনাথ দাস (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোন্নগর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

মেয়ের বিয়ের জন্য মিষ্টির অগ্রিম দিতে বেরিয়ে খুন হয়ে গেলেন এক প্রৌঢ়।

সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে খানিক দূরে একটি কারখানার পরিত্যক্ত আবাসনের শৌচাগারের চেম্বার থেকে উদ্ধার হল বিশ্বনাথ দাস (৫৪) নামে ওই প্রৌঢ়ের দেহ। তাঁকে খুনের অভিযোগে পিন্টু সিংহ নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোন্নগরের ধর্মডাঙা এলাকার ঘটনা। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বনাথবাবুর বাড়ি ধর্মডাঙার পিয়ারাবাগান লেনে। তিনি স্থানীয় একটি রং কারখানায় কাজ করতেন। পিন্টুও ওই কারখানার কর্মী। বাড়ির লোকেরা জানান, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বনাথবাবুর মেয়ের বিয়ে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ স্থানীয় চটকল লাইনে মিষ্টির দোকানে অগ্রিম দিতে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন বিশ্বনাথবাবু। আর ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও হদিশ না পেয়ে শনিবার রাতে তাঁর ছেলে টোটন উত্তরপাড়া থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি করেন।

তদন্তে নেমে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ সোমবার সকালে পিয়ারাবাগান এলাকারই বাসিন্দা, বছর ত্রিশের পিন্টুকে আটক করে। উত্তরপাড়া থানার আইসি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গ, কোন্নগর ফাঁড়ির ইন-চার্জ অনুপ মণ্ডল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

কমিশনারেট সূত্রের দাবি, টানা জেরায় পিন্টু জানায়, ওই রাতে বাড়ির কাছেই মাঠের ধারে অন্ধকার, নির্জন জায়গায় বসে তারা মদ্যপান করছিল। বিশ্বনাথও সেখানে ছিলেন। তিনি পিন্টুকে গালিগালাজ করেন। সেই রাগে ওই প্রৌঢ়কে সে বেশ কয়েকটি ঘুসি মারে। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ দিন বিকেলে পিন্টুকে ওই মাঠের কাছে নিয়ে আসে পুলিশ। তার দেখানো চেম্বার থেকে বিশ্বনাথের দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। টোটোনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণ লোপের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

কমিশনারেটের আধিকারিকদের দাবি, খুনের কথা স্বীকার করার পরেও দেহ যাতে না মেলে, সে জন্য পুলিশকে প্রথমে ভুল তথ্য দিয়েছিল পিন্টু। পুলিশকে সে বলেছিল, মৃত বিশ্বনাথকে সাইকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে পায়ে দড়ি বেধে গঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। কিন্তু সেই গল্প পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এর পরেই চেম্বারে দেহ ফেলে দেওয়ার কথা জানায় সে।

এলাকায় গুঞ্জন, বিশ্বনাথবাবুর মেয়ের সঙ্গে ধৃতের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ায় সে এই কাণ্ড ঘটায়। কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অতুল ভি বলেন, ‘‘মদের আসরে বিশ্বনাথের সঙ্গে পিন্টুর কথা-কাটাকাটি হয়। তার পরেই সে ওই কাণ্ড। মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে বিশ্বনাথের উপর পিন্টুর আক্রোশ ছিল বলে অনুমান। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

নিহতের আত্মীয় তথা কোন্নগরের উপ-পুরপ্রধান গৌতম দাসেরও বক্তব্য, ‘‘ওদের মধ্যে আগে সম্পর্ক ছিল। তার পরে ছেলেটির বিয়ে হয়ে যায়। সন্তানও আছে। এখন ভাইঝির বিয়ে ঠিক হওয়ায় ও সহ্য করতে না পেরেই এটা করল বলে মনে হচ্ছে।’’ পিন্টুর নাম আগেই পুলিশের খাতায় ছিল। ডাকাতির চেষ্টা, অস্ত্র আইনের ধারায় গ্রেফতারও হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly Murder Lover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE