অকুস্থল: ঘটনাস্থলে বিক্ষুব্ধ জনতা। মৃত শ্যামল মল্লিক (ইনসেটে)।
বছর তিনেক আগে ইন্দিরা আবাসের ঘর জুটেছিল। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে গোলমালের কারণ দেখিয়ে পঞ্চায়েত ঘর তৈরির ছাড়পত্র দেয়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আমতার গাজিপুর হাটতলার শ্যামল ভৌমিক (৬৩)। মঙ্গলবার হাইকোর্টের নির্দেশে জমি মাপজোক করতে আসেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। সেই সময় স্থানীয় পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান সোমা গুঁইয়ের স্বামী তথা গাজিপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি পলাশ গুঁই লোকজন নিয়ে সেখানে হাজির হন। অভিযোগ, তিনি শ্যামলবাবুকে চড়চাপড় মেরে তাঁর হাত থেকে জমির পরচা কেড়ে নেন। মারের চোটে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান শ্যামলবাবু। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার পর পুলিশ গেলেও অভিযুক্তদের সন্ধান মেলেনি বলে তারা জানিয়েছে।
শ্যামলবাবুর মৃত্যুর খবরে এ দিন গ্রামবাসীদের একাংশ পলাশবাবুর বাড়িতে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে। তাদের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূলের অনেক কর্মীকেও দেখা যায়। ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে সংবাদমাধ্যমের উপরেও চড়াও হয় হামলাকারীরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এলেও তা মানতে চাননি সোমাদেবী। তাঁর দাবি, মারধরের ঘটনায় তাঁর স্বামী জড়িত নন। তবে পলাশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ পেলে মামলা রুজু করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি পুলক রায় অবশ্য বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।’’
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের পরিজনরা
স্থানীয় সূত্রে খবর, ৬৩ বছরের শ্যামলবাবু স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে ভাঙা ছিটেবেড়ার ঘরে থাকতেন। বছর তিনেক আগে তাঁর নামে ইন্দিরা আবাসের ঘর মঞ্জুর হয়। নিয়মানুযায়ী এর পর পঞ্চায়েত থেকে উপভোক্তার কাছে জমির দলিল-সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। উপভোক্তা তা জমা দিলে পঞ্চায়তের তরফে ব্লকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে তিনটি পর্যায়ে প্রাপককে ঘর তৈরির টাকা দেওয়া হয়। বিমলবাবুর অভিযোগ, আমতা-২ ব্লকের গাজিপুর পঞ্চায়েতে তাঁর ভাই জমির সমস্ত কাগজ জমা দিলেও পঞ্চায়েত ছাড়পত্র দেয়নি। তাই গত জুলাইয়ে শ্যামলবাবু কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। সম্প্রতি আদালত আমতা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশ দেয় তারা যেন জমির মাপজোক করে তাদের কাছে রিপোর্ট দেয়। সেইমতো এ দিন আমতা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আমিন জমির মাপজোক শুরু করলে এই ঘটনা ঘটে। যাকে ঘিরে ফের সামনে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর। এলাকার মানুষের অভিযোগ, পলাশবাবু দলের যে গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত তাঁদের দৌরাত্ম্যেই ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের চার জন পঞ্চায়েত সদস্য দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে যেতে পারেন না। ওই চার সদস্যের একজন অভিযোগ করেন, পলাশের দলবল প্রতিটি কাজের জন্য তোলা নেয়। দলের কেউ ইন্দিরা আবাস-সহ নানা প্রকল্পে টাকা পেলে তাঁদের কাছ থেকেও তোলা আদায় করে পলাশের দলবল। তিনি জানান, শ্যামলবাবুও তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। কিন্তু তিনি পলাশবাবুর দলবলকে তোলা দিতে না চাওয়াতেই তাঁর ঘরের ছাড়পত্র দেয়নি পঞ্চায়েত।
সোমাদেবী অবশ্য তোলা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘পাশের একটি পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে গোলমাল চলছিল শ্যামলবাবুর। সেই কারণেই ঘরের ছাড়পত্র দেওয়া যায়নি। বিমলবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘এটা নিজেদের জমি। কারও সঙ্গে কোনও গোলমাল নেই।’’
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy