প্রতীকী ছবি।
বন্ধুর অ্যাডমিট কার্ড ফোটোকপি করিয়ে তার উপর নিজের নাম ও ছবি লাগিয়ে ফের প্রিন্ট আউট বের করেছিল এক কিশোর। বাড়িতে সেটিই দেখিয়েছিল। গত সোমবার থেকে রোজ স্কুল ইউনিফর্ম পরে বাবার মোটর বাইকে চড়ে পরীক্ষাও দিতে আসছিল সে।
ধরা পড়ে গেল শুক্রবার, ইতিহাস পরীক্ষার দিন— গত বছর নবম শ্রেণিতে পাশই করতে পারেনি ছেলেটি। হাওড়ার নেহরু বালিকা বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরা তাকে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারপরই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে।
শুধু মাধ্যমিকের চারদিন নয়। গত দেড় বছর ধরে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোত হাওড়া দাশনগরের বাসিন্দা ওই কিশোর। ফিরেও আসত নির্দিষ্ট সময়ে। অথচ, স্কুল জানিয়েছে নবম শ্রেণিতে ফেল করার পর আর স্কুলে আসেনি সে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোর বাড়িতে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেয়নি সে দশম শ্রেণিতে উঠেনি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ দিক সে দিক ঘুরে বিকেলে বাড়ি ফিরত। পারিবারিক সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতিও চলছিল। প্রতিটি বিষয়ে গৃহশিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে পড়াশোনা দেখতেন তার মামা।
প্রতিদিনই তার বাবা তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স্কুলের ভিতরে ঢোকার ভান করে সরে পড়ত সে। এ দিন দুপুরে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও ইউনিফর্ম পরা এক কিশোরকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় নেহরু বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সত্যিটা বলে ফেলে ওই কিশোর। জানায়, নবম শ্রেণিতে ফেল করার কথা বাড়িতে বললে অনর্থ হবে ভেবেই সে চেপে গিয়েছিল।
দাশনগরে একটি লোহার ছোট কারখানা চালান ছেলেটির বাবা। থানায় এসে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এ রকম করতে পারে ও। আমি তো দশম শ্রেণির বইও কিনে দিয়েছিলাম। পড়াশোনাও তো করত!’’ কিশোর অবশ্য ভেঙে পড়েছে এ দিন। তার কথায়, ‘‘বাবা বলতেন আমাকে মাধ্যমিক পাশ করতেই হবে। তাই নবম শ্রেণিতে ফেল করার কথা বাবাকে বলতে পারিনি।’’
কিশোর এবং তার বাবার কাউন্সেলিং করান ওসি সুবীর রায়। তিনি জানান, বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসাবে পরের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে। তাতে রাজি হয়েছে কিশোর। বলেছে, ‘‘আমার তো দশম শ্রেণির সব পড়া মুখস্ত। সুযোগ পেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব।’’
ওই কিশোরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবশ্য জানিয়েছেন, ফেল করার পর ছেলেটি আর স্কুলে ভর্তি হয়নি। এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয় ভেবে তাঁরা আর খোঁজ নেননি। তবে তাঁর দাবি, ‘‘বাবা-মায়ের চাপেই মনে হয় ছেলেটি এমন করেছে। বাড়ির সহযোগিতা পেলে ও নবম শ্রেণিতে আরও একবার পড়তে পারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy