Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

মঙ্গলবার সকালে, বালির মোহনলাল বাহাওয়ালা রোডের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সুমিত গুপ্ত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রতিবেশী যুবকটিকে দেখতে পাচ্ছিলেন না ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁর ঘরের দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়ে দেখলেন, ভিতর থেকে সেটি বন্ধ। প্রতিবেশীদের ফোন পেয়ে ওই যুবকের বোন এসে পুলিশকে নিয়ে দরজা ভাঙলেন। দেখা গেল, সিলিং থেকে ঝুলছে ওই যুবকের পচাগলা দেহ। মেঝেতে পড়ে রক্ত!

মঙ্গলবার সকালে, বালির মোহনলাল বাহাওয়ালা রোডের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সুমিত গুপ্ত (২৯)। তাঁর দেহের পাশ থেকে পাওয়া সুইসাইড নোট দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন প্রায় সাত-আট দিন আগে আত্মহত্যা করেছেন সুমিত। প্রাথমিক অনুমান, অবসাদের জেরে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

পুলিশ ও যুবকটির পরিবার সূত্রের খবর, আদতে মণিপুরের বাসিন্দা সুমিতের বাবা প্রায় দশ বছর আগে বালিতে ওই ফ্ল্যাটটি কেনেন। দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে তাঁরা সেখানে কিছু দিন থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পরে সুমিত, তাঁর মা এবং বোন মাঝেমধ্যে বালিতে এসে থাকতেন। মণিপুরেই স্টেশনারি জিনিসের ব্যবসা করতেন ওই যুবক। গত জুন থেকে তিনি বালির ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। কিছু দিন আগে তাঁর মা নারায়ণীদেবী ছেলের কাছে আসেন। সুমিতের বোন শ্বেতা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের মা, ২৫ ডিসেম্বরে উত্তরপ্রদেশে অন্য ছেলের বাড়িতে চলে যান। এর পর থেকেই সুমিতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না।

আবাসনের চারতলায় থাকতেন সুমিত। তাঁর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা প্রেমকুমার শাহ বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরেই ওঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি নীচের আরেক প্রতিবেশীকে জানাই।’’ সেই প্রতিবেশী শ্যামল মুখোপাধ্যায় জানান, সোমবার রাতে তাঁরা সুমিতের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বারবার ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে শ্যামলবাবুই ফোনে নারায়ণীদেবীকে জানান। তিনি ফোন করে মেয়ে শ্বেতাকে খবর দেন। এ দিন সকালেই বেঙ্গালুরু থেকে বালি চলে আসেন সুমিতের বোন।

পুলিশ জানিয়েছে, দরজা ভেঙে দেহটি উদ্ধার করার পরে দেখা যায়, দেহে পোকা হয়ে গিয়েছে। সে জন্যই দেহে ক্ষত হয়ে মেঝেতে রক্ত পড়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, পুরো ঘরটি পরিপাটি করে সাজানো। শোয়ার ঘরে যেখানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, সেখানে একটি ছোট টুল উল্টে পড়ে রয়েছে। বিছানার উপরে ছড়ানো মানসিক অবসাদ সংক্রান্ত বই। পড়ে রয়েছে প্রচুর পোড়া সিগারেট। বিছানাতেই বই চাপা দেওয়া ছিল ইংরেজিতে লেখা সুইসাইড নোটটি। পুলিশ জানায়, সেটির তারিখ দেওয়া ২১ ডিসেম্বর। এ থেকেই তদন্তকারীদের অনুমান, অনেক দিন ধরেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিলেন ওই যুবক। কিন্তু মা থাকায় তা করতে পারেননি। ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণীদেবী চলে যাওয়ার পরেই সম্ভবত এই ঘটনাটি ঘটেছে।

এ দিন শ্বেতা পুলিশকে জানান, গত জানুয়ারিতে সুমিতের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিলে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুমিতের স্ত্রী। এর পর থেকেই ভেঙে পড়েন সুমিত। ব্যবসাও ঠিক মতো করছিলেন না। জুনে বালিতে চলে আসেন তিনি। শ্বেতা বলেন, ‘‘কেউ ফোন করলে দাদা ধরতেন না। মাঝেমধ্যে মেসেজ করলেও তিন-চার দিন পরে উত্তর দিতেন তিনি। তাই মা চলে যাওয়ার পরে পরিবারের আর কেউ দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead body Youth Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE