Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অস্ত্র দেখা চন্দননগরে সম্প্রীতি মিছিল

এ দিনও বামফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত হল মিছিল। তবু তা পেল আমজনতার পদভার। আর তাতেই শহর বুঝিয়ে দিল সম্প্রতির প্রতি তার আস্থা আজও অটুট। চন্দননগর জ্যোতির মোড়ে দাঁড়িয়ে মিছিল দেখছিলেন এক প্রবীণ।

সম্প্রীতির মিছিল চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রীতির মিছিল চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

ক’দিন আগেই রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র দেখেছে শহর। ছোটদের হাতে হাতেও সে দিন ঘুরেছে ধারালো তলোয়ার, বাঁকানো খাঁড়া। রবিবার আর এক মিছিল দেখল চন্দননগর। সেখানে হাতে হাতে ধরা লাল গোলাপ আর অস্ত্রের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদের স্লোগান।

তা দেখে ভরসা পেলেন শহরের অনেকেই। বললেন, গঙ্গাতীরের শান্ত শহর দীর্ঘদিন ধরেই বয়ে আনছে ঐক্যের ঐতিহ্য। দেশি-বিদেশি সংস্কৃতির মিলন সেই কোন কাল থেকে। এতদিন অস্ত্র শুধু দেখা গিয়েছে জগদ্ধাত্রীর রণমূর্তিতে। সেই চন্দননগর চমকে উঠেছিল ঝনঝন শব্দে। গত ২৬ মার্চ রামনবমীকে কেন্দ্রে করে সারাদিন দাপিয়ে বেড়িয়েছে এক ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল। পিছনে রাজনীতির প্রচ্ছন্ন মদত। ছোট ছোট শিশুদেরও দেখা গিয়েছে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে নামতে— খোলা রাস্তায়, খেলার ছলে।

এ দিনও বামফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত হল মিছিল। তবু তা পেল আমজনতার পদভার। আর তাতেই শহর বুঝিয়ে দিল সম্প্রতির প্রতি তার আস্থা আজও অটুট। চন্দননগর জ্যোতির মোড়ে দাঁড়িয়ে মিছিল দেখছিলেন এক প্রবীণ। তিনি বলেন, ‘‘এর আগের দিন তরোয়ালের দৈর্ঘ্য দেখেছি তাতে শিউরে উঠেছি। চন্দননগরে ওই মিছিল আগে কখনও দেখিনি। আজ কিছুটা ভরসা পেলাম।’’

রবিবার দুপুরে চন্দননগর স্টেশন রোড থেকে শুরু হয় বামেদের প্রতিবাদ মিছিল। নেতাদের দাবি, ধর্মের নামে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা চলছে গোটা দেশ জুড়ে। রাজনৈতিক স্লোগান যাই থাক কয়েক হাজার মানুষ মিছিলে পা মিলিয়েছেন সম্প্রীতির স্বার্থে। বাগবাজার, জিটি রোড হয়ে মিছিল যায় জ্যোতির মোড় ধরে মানকুন্ডুর সার্কাস ময়দান পর্যন্ত। এ দিনের মিছিলে ছিল না কোনও মাইক। ব্যানারে লেখা সম্প্রীতির মহামিছিল। মিছিল থেকেই গোলাপ বিলি করা হয় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে।

পুরোভাগে ছিলেন সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই-সহ বামফ্রন্টের জেলা প্রতিনিধিরা। ছিলেন সিপিএমের বর্তমান জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, প্রাক্তন মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী, প্রাক্তন সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, হাওড়ার প্রাক্তন জেলা সম্পাদক শ্রীদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। দেবব্রতবাবু বলেন, “এই ধর্মান্ধতা রুখে দেব। আজ অন্তত দশ হাজার মানুষ বুঝিয়ে দিলেন ধর্মের নামে তাণ্ডব আমরা কিছুতেই মেনে নেবে না।”

অনেকেই বলছেন, প্রতিবাদ হোক আরও। মানুষের মধ্যে ভরসা ফেরাতে এই মিছিল অনেকখানি সফল। ‘‘গত বছরও বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছড়িয়েছিল এই চন্দননগরে। এ বার আর তার পুনরাবৃত্তি হবে না’’— জোর গলায় বললেন দাঁড়িয়ে থাকা এক কলেজ পড়ুয়া তরুণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

harmony rally Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE