অভিযুক্ত: কৌস্তুভ বক্সী (বাঁ দিকে) পারমিতা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
এক মাস আগে পারমিতা বক্সী নামে উত্তরপাড়ার এক যুবতীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। চাকরি না-ছাড়ার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পারমিতার উপরে চাপ দিচ্ছিলেন, এই ছিল অভিযোগ। মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার আলিপুর থেকে গ্রেফতার করা হল পারমিতার স্বামী, হাওড়ার বালির বাসিন্দা কৌস্তুভ বক্সীকে।
পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েক ধরে কৌস্তুভ আলিপুর আদালত চত্বর এবং সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যাতায়াত করছিলেন। ওই ব্যাঙ্কের সামনে থেকে তাঁকে ধরা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, বধূ নির্যাতন এবং মারধরের মামলা রুজু করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে। ধৃতকে বুধবার শ্রীরামপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তাঁর ও পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এ দিন কৌস্তুভ দাবি করেন, পারমিতা নিজের ইচ্ছেতেই চাকরি করতেন। উপার্জনের টাকা বাপের বাড়িতে পাঠাতেন। ওঁর উপর কোনও অত্যাচার করা হয়নি। কৌস্তুভের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পারমিতাই আমাকে মারত। মা- বোনের গায়েও হাত তুলত। ও নিয়মিত মদ খেত, ধূমপান করত। আমাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাইত।’’ কিন্তু কেন আত্মঘাতী হলেন পারমিতা? কৌস্তুভের জবাব, ‘‘সেটা বলতে পারব না।’’
কৌস্তভের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পারমিতার বাপেরবাড়ির লোকেরা। মৃতার মা বনানী দাস বলেন, ‘‘মেয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু যারা ওঁকে বাঁচতে দিল না, তাদের কঠিন শাস্তি হোক। মেয়ে যদি মদ খেয়ে থাকে, তা হলেও তার জন্য ওরাই দায়ী। এখানে তো মেয়ে সকলের সঙ্গে মিশত। তেমন হলে কেউ তো বুঝতে পারত!’’
চলতি বছরের জুনে কৌস্তুভ-পারমিতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারমিতা চাকরি পান পুণেতে। কৌস্তুভ কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। গত ২৭ অক্টোবর উত্তরপাড়ার মাখলায় নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে বছর ঊনত্রিশের পারমিতার ঝুলন্ত দেহ মেলে। সেখান থেকে পারমিতার ডায়েরিও উদ্ধার হয়। তাতে তাঁর উপরে হওয়া অত্যাচার এবং আত্মহত্যার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে তিনি দায়ী করেন বলে তদন্তকারীরা জানান।
কিন্তু কেন?
মৃতার বাপের বাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৌস্তুভ প্রথমে বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে তিনি বদলি নিয়ে পুণে চলে যাবেন। এই কথা শুনে পুণে যেতে রাজি হন পারমিতা। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পারমিতা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি চাকরি ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে থাকবেন। পারমিতার পরিবারের অভিযোগ, এতে রাজি হননি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। কারণ, পারমিতাকে রোজগারের টাকা শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে হতো। পান থেকে চুন খসলে শাশুড়ি আর ননদ অপমান করতেন। মাসখানেক আগে পুণে থেকে উত্তরপাড়ায় ফিরে আসেন পারমিতা। ২৭ অক্টোবরের ওই ঘটনা। অভিযুক্তেরা ধরা না-পড়ায় পারমিতাদের পড়শিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে তাঁরা এবং পারমিতার বন্ধুরাও পথে নেমেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy