সরকারি নির্দেশিকা মেনে জেলা প্রশাসন হাওড়া শহরে টোটোর পরিবর্তে ই-রিকশা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল এক বছর আগে। কিন্তু এই এক বছরে এক জন টোটোমালিকও সরকারি নির্দেশ মেনে টোটোকে ই-রিকশায় বদলাতে আসেননি। ফলে পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যাওয়ার মুখে। শহরের বড় রাস্তাগুলিতে টোটো বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তও বাতিল হতে বসেছে। উল্টে বেআইনি টোটোয় ভরে গিয়েছে শহরের সমস্ত বড় রাস্তা। যার জেরে মন্থর হয়ে গিয়েছে যানবাহনের গতি। উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসন তাই ঠিক করেছে, পুলিশের দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া শহরে কোনও টোটো চলতে দেওয়া হবে না।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই টোটো চলতে শুরু করায় রাজ্য পরিবহণ দফতর প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়, যে সব টোটোর ‘টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (টিন) নেই, তাদের রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, যে সব টোটোর টিন থাকবে, তাদের টোটো থেকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করতে হবে। সে জন্য প্রতিটি জেলার ব্লকে ও পুরসভা এলাকায় জেলা প্রশাসনকে ই-রিকশা নিয়ে শিবিরের আয়োজন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, অন্যান্য জেলার মতো হাওড়ার গ্রামাঞ্চল ও পুরসভা এলাকাগুলিতে গত এক বছর ধরে একাধিক শিবির করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে বিভিন্ন ই-রিকশা প্রস্তুতকারী বেসরকারি সংস্থা-সহ ব্যাঙ্ককর্তাদের রাখা হয়। টোটো থেকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করতে গেলে ব্যাঙ্ক ঋণের ক্ষেত্রে কী কী সুবিধা মিলবে, তা বুঝিয়ে বলেন তাঁরা। ঠিক হয়, যে সব টোটোমালিক ওই শিবিরে যোগ দেবেন এবং সরকারি ফর্মে টোটো থেকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করার আবেদন করবেন, তাঁদেরই ই-রিকশা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, টোটোর পরিবর্তে ই-রিকশা চালানোর জন্য এখনও পর্যন্ত এক জন টোটোমালিকও নাম নথিভুক্ত করাননি। উপরন্তু গোটা জেলা ও হাওড়া পুরসভা এলাকা জুড়ে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বেআইনি টোটোর সংখ্যা। হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ লাটুয়া বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় এক মাস ধরে এ নিয়ে শিবির করা হয়েছে। টোটোমালিকদের বোঝানো হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যে সব রাস্তায় বাস চলে, সেখানে ই-রিকশা চলতে দেওয়া হবে না। সম্ভবত সেই কারণেই কোনও টোটোমালিক এই প্রকল্পে রাজি হননি।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ নিয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে পরবর্তী কোনও নির্দেশ না আসায় হাওড়ায় গোটা পরিকল্পনাই কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। অন্য দিকে, বেআইনি ভাবে চলা টোটো তৈরির কারখানাগুলিকে বন্ধ করার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও আইন না থাকায় বেড়ে চলেছে টোটোর সংখ্যা।
হাওড়া সিটি পুলিশের বক্তব্য, টোটো যে আগামী দিনে শহরের গতিকে আরও কমিয়ে দেবে এবং দুর্ঘটনা বাড়বে, সে আশঙ্কা প্রকাশ করে বছর তিনেক আগেই তৎকালীন এডিজি-কে (ট্র্যাফিক) চিঠি দিয়েছিলেন তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে। এর পরে একাধিক বার পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা হয়েছে টোটোর টিন নম্বর দিয়ে বেআইনি টোটো নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু সেখানেও টোটোর টিন নম্বর জাল করে বা একাধিক টোটোয় একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে টোটো চালানো হচ্ছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক ট্র্যাফিক-কর্তা বলেন, ‘‘২০১৬ সালে যেখানে ২১৩৫টি টোটো চলত, সেখানে এখন তার ১০-১৫ গুণ বেশি টোটো চলছে। এই মুহূর্তে পুরসভার উচিত টোটো তৈরির কারখানাগুলিকে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়া। একমাত্র উৎপাদন বন্ধ করলেই টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’’
টোটোর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এর পরে হাওড়ার রাস্তাগুলিতে হাঁটাচলা করা যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, টিন নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া আর টোটো চলতে দেওয়া হবে না। একটি বেসরকারি সংস্থাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। যে সব টোটোর নম্বর নেই এবং জাল টিন নম্বর নিয়ে চলছে, তা পরীক্ষা করে দেখবে তারা। টোটোমালিকদেরও থানায় ডেকে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই ওই টোটোগুলিকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করার কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy