Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

নাটকের মঞ্চ মাতাতে তৈরি হচ্ছে লিলুয়া হোম

শিল্পী জানান, সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী ও সচিব ছাড়াও বালির বিধায়ক তথা লিলুয়া হোমের পর্যবেক্ষকের সঙ্গেও তাঁর এ বিষয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে।

উদ্যোগ: পুজোর সময়ে লিলুয়া হোমের আবাসিকদের নিয়ে এ ভাবেই তৈরি হয়েছিল নকল নিউ মার্কেট। —ফাইল চিত্র।

উদ্যোগ: পুজোর সময়ে লিলুয়া হোমের আবাসিকদের নিয়ে এ ভাবেই তৈরি হয়েছিল নকল নিউ মার্কেট। —ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

জেল বন্দিদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘বাল্মীকি প্রতিভা’। এ বার পরিকল্পনায় ‘ভানুসিংহের পদাবলী’।

তবে সেটি তৈরি হবে লিলুয়া হোমের আবাসিক মেয়েদের নিয়ে। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এই পরিকল্পনা নিয়ে কথাও বলেছেন কয়েদিদের নিয়ে কাজ করা নৃত্যশিল্পী অলোকানন্দা রায়।

শিল্পী জানান, সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী ও সচিব ছাড়াও বালির বিধায়ক তথা লিলুয়া হোমের পর্যবেক্ষকের সঙ্গেও তাঁর এ বিষয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে। হোমের ২০-২৫ জন মেয়েকে নিয়‌ে ওই নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করা হবে। অলোকানন্দা বলেন, ‘‘হোমের মেয়েদের প্রতিভা বাইরের লোকেরা দেখতে পান না। নৃত্যনাট্য তৈরি
হলে সবাই তা দেখতে পাবেন। সাধারণ মানুষের প্রশংসা পেয়ে হোমের মেয়েরাও মানসিক ভাবে আনন্দ পাবেন। এতে তাঁদের মনের বিকাশও ঘটবে।’’

প্রসঙ্গত, লিলুয়া হোমের আবাসিকদের মানসিক বিকাশের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজ্যের সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশু দফতর। নৃত্যনাট্যের পরিকল্পনা সেখানে নতুন সংযোজন বলেই মনে করছেন দফতরের কর্তারা। দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘অলোকানন্দা রায়ের থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। বিষয়টি খুবই ভালো। রাজ্যের অন্যান্য হোমের মতো লিলুয়াতেও একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিছু হাতের কাজের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে।’’

স্যাঁতসেঁতে ঘরে ছেঁড়া কম্বলের মধ্যেই দিন কাটানো। ভাতের মধ্যে কাঁকর, পাতলা জলের মতো ডাল। মাঝেমধ্যে জুটত ছোট্ট একটা পাতলা মাছের পিস। দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিনিয়ত এমনই অব্যবস্থার অভিযোগের আঙুল উঠত লিলুয়া হোমের বিরুদ্ধে। এ সব থেকে মুক্তি পেতে পাঁচিল টপকে বেশ কয়েক বার পালানোর চেষ্টা করেছেন অনেক মহিলা আবাসিকও। মন্ত্রী জানান, এর পরেই রাজ্যের সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশু দফতর থেকে বিশেষ নজর দেওয়ার কাজ শুরু হয় লিলুয়া হোমে। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে ‘বন্দি’ থাকার ফলে মেয়েদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া বা মারপিটের প্রবণতা তৈরি হয়েছিল।

এই মুহূর্তে লিলুয়া হোমে প্রায় ২৩০ জন আবাসিক আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিশু। বালির বিধায়ক তথা হোমের পর্যবেক্ষক বৈশালী ডালমিয়া জানান, আবাসিকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার বিকাশ-বিনোদনের জন্য ইতিমধ্যেই বিবি রাসেল পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও তাঁদের শেখানো হচ্ছে তাঁতের শাড়ি তৈরি সহ সেলাই ও এমব্রয়ডারির কাজ। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নাচ-গানের প্রশিক্ষণ। অবসাদ কাটাতে কাউন্সেলিংও হচ্ছে। আবাসিকদের মানসিক আনন্দের জন্য দুর্গাপুজোর আগে হোমের ভিতরেই তৈরি হয়েছিল নকল নিউ মার্কেট। সেখানে বিক্রি হয়েছিল জামা, শাড়ি, গয়না থেকে ফুচকা, আইসক্রিম। নকল টাকা দিয়ে সেই মার্কেটে পুজোর বাজারও করেছিলেন আবাসিকেরা।

বৈশালীদেবী জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বদলাতে হোমের মধ্যেই এ বার বিনোদন পার্ক তৈরি করছে হাওড়া পুরসভার উদ্যান ও সৌন্দর্যায়ন দফতর। বসানো হচ্ছে দোলনা, স্লিপ। রাতে পার্কে জ্বলবে বিভিন্ন রঙিন আলো। হোমের মাঝে থাকা বিশাল জলাশয়ে বসানো হচ্ছে ফোয়ারা। তৈরি হচ্ছে ব্যাডমিন্টন কোর্টও।

পাশাপাশি, কয়েক মাস আগে লিলুয়া হোমের ওই পুকুরেই মৎস্য দফতর থেকে ছাড়া হয়েছে মাছের চারা। সেখানেই হোমের মেয়েদের শেখানো হচ্ছে মৎস্য প্রতিপালন। শশী পাঁজা জানান, শুধু লিলুয়া হোমই নয়। রাজ্যের সব সরকারি হোমেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ মেয়েদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকার চাকরি দেওয়া হচ্ছে। চলছে নৃত্য থেরাপি-র মাধ্যমে মানসিক বিকাশও। তাঁদের তৈরি পোশাক ও গয়না বাজারে বিক্রি করে কী ভাবে তাঁরা রোজগার করতে পারবেন, সেই পরিকল্পনাও নিচ্ছে রাজ্য সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

home Liluah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE