Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
ডেঙ্গি রুখতে পুর-উদ্যোগ উত্তরপাড়ায়
Dengue

সেপটিক ট্যাঙ্কে বসছে মশারি জাল

দু’বছর আগে শ্রীরামপুরে ‘মহামারি’ হয়েছিল ডেঙ্গি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুরের স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে অভিভাবকেরা ভয় পেতেন।

রাখ-ঢাক: কাজ চলছে জোর কদমে। নিজস্ব চিত্র

রাখ-ঢাক: কাজ চলছে জোর কদমে। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

দিন চারেক আগেই গুড়াপে হুগলির প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় শিথিলতা না-রাখার ব্যাপারে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। শনিবার থেকেই পুরোদমে মাঠে নামল উত্তরপাড়া পুরসভা। শহরের প্রতিটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখ মশারির জাল দিয়ে ঘেরা শুরু হল।

দু’বছর আগে শ্রীরামপুরে ‘মহামারি’ হয়েছিল ডেঙ্গি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুরের স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে অভিভাবকেরা ভয় পেতেন। গত মরসুমে ওই শহরে ডেঙ্গি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এলেও ওই রোগ থাবা বসিয়েছিল উত্তরপাড়া এবং বৈদ্যবাটীতে। ফের মরসুম বদলেছে। শীত পেরিয়ে গরমের প্রকোপ বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গির আতঙ্কও।

পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এ বার একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শনিবার থেকে শহরের প্রতিটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখ মশারির জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া শুরু হয়েছে। এ দিন ব্যানার্জিপাড়া এলাকায় পুরসভা ওই কাজ করে।

এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মরার তেল দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মহিলা কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কারও জ্বর হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে ওই কার্ডে লিখে নিচ্ছেন। অনেকটা শ্রীরামপুরের ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর মতোই।

পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সেপটিক ট্যাঙ্ক ঢাকার বিষয়ে জেলাতে এই প্রথম কাজ শুরু হল। পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডে আমাদের দল ঘুরছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন ১২০০ বাড়িতে ডেঙ্গি মোকাবিলায় ওই জাল লাগানো। যাতে চার সপ্তাহে কাজ শেষ করা যায়।’’ তাঁর দাবি, প্রতি সপ্তাহে একই জায়গায় মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। মশা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না আমরা।’’

ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরপ্রধান সক্রিয়তা দাবি করলেও রাস্তাঘাট কিন্তু অন্য কথা বলছে। বিশেষত, তিন মাস আগে যে সব রাস্তার ধারের নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল, তাতে গতি নেই— অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। ফলে, ডেঙ্গির মরসুমের আগে সেই কাজ শেষ হবে কিনা,
প্রশ্ন উঠছে।

উত্তরপাড়া স্টেশন থেকে কাঁঠালবাগান বাজার হয়ে বড় রাস্তাটি দোলতলা হয়ে জিটি রোডে মিশেছে। কিন্তু এখন সেখানে পথ চলাই দেয়। কারণ, ওই রাস্তার নিকাশি নালা কিছুটা চওড়া করে স্ল্যাবে ঢাকা হচ্ছে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, কাজ সম্পূর্ণ হলে ওই রাস্তার নিচু এলাকায় জল জমবে না। মশার উৎপাত কমবে। ঢাকা নালার উপর ছোট ফুটপাত হবে। তাতে মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। যানজট বা পথ দুর্ঘটনাও কমবে। কিন্তু সেই সব সুবিধা মেলার আগেই ডেঙ্গি হানা দেবে না তো? এটাই প্রশ্ন। কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। কাজ র্দীঘায়িত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি পুরপ্রধানও। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ঠিকাদারের কারণে কাজে দেরি হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে আমরা চেষ্টা করছি ১৫ মে-র মধ্যে কাজ শেষ করতে।’’

তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক, কাজ কিছুটা হলেও বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ আমাদের মূল ঠিকাদারের আত্মীয় অসুস্থ।’’

ফলে, সেপটিক ট্যাঙ্ক মশারির জালে ঢাকা হলেও নিকাশি নালা কিন্তু ডেঙ্গির দুশ্চিন্তা রেখেই দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE