বিদ্যুৎ জানা
হাত দুটো সামনে থেকে গামছা দিয়ে বাঁধা। গলায় দড়ির ফাঁস। দু’হাতে আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। পায়ের নীচে কোনও টুল বা টেবিল ছিল না।
বৃহস্পতিবার সকালে রামরাজাতলার রামচরণ শেঠ রোডে একটি চারতলা বাড়িতে পাখা লাগানোর হুক থেকে এমনই অবস্থায় উদ্ধার হল এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ। মৃতের নাম বিদ্যুৎ জানা (২০)। তাঁর বাড়ি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের সিংটিতে। পেশায় ওই যুবক ছিলেন কাঠের মিস্ত্রি। এ দিন ওই রহস্য-মৃত্যু ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ফ্ল্যাটের নীচে ভিড় করেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। বিদ্যুতের পরিবারের লোকজন ঘটনাটিকে খুন বলে দাবি করলেও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন। কারণ ঘর থেকে পাওয়া একটি ডায়েরিতে সুইসাইড নোট মিলেছে। যদিও ওই সুইসাইড নোটটি বিদ্যুতেরই লেখা কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি তদন্তকারীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রামরাজাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে তিনতলা ওই ফ্ল্যাটে কয়েক মাস ধরে ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের কাজ চলছিল। বিদ্যুৎ সেখানেই কাজ করছিলেন। রাতে আর এক মিস্ত্রির সঙ্গে ঘুমোতেন ফ্ল্যাটেরই একটি ঘরে। যদিও বুধবার রাতে ওই সহকর্মী পাশের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এ দিন বিদ্যুতের ওই সহকর্মীই তাঁকে পাখার হুক থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। তিনিই খবর দেন বাড়ির মালিককে। খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ। পরে পৌঁছন এসিপি (দক্ষিণ) গুলাম সারোয়ার-সহ পদস্থ কর্তারা। তাঁরা বিদ্যুতের ওই সহকর্মীকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে মৃতের পরিবারের লোকজন এই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নন। তাঁদের অভিযোগ, ওই যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করে প্রমাণ লোপাট করার জন্যই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের দাদা উল্লাস জানা জানান, বিদ্যুৎ কয়েক দিনের ছুটিতে দেশের বাড়ি গিয়েছিলেন। বুধবার তিনি ফের রামরাজাতলা ফিরে কাজে যোগ দেন।
উল্লাসবাবু বলেন, ‘‘ভাই এতটা মানসিক অবসাদ বা মারাত্মক কোনও সমস্যায় ভুগছিল না যে আত্মঘাতী হবে। পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবেই এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। আসলে এটা খুন। কোনও মানুষকে সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিতে হলে টুল বা টেবিলে উঠে দিতে হয়। কিন্তু মৃতদেহের আশপাশে তা ছিল না।’’ কয়েক দিন আগেই এলাকায় একটি মোবাইল চুরির ঘটনায় কয়েক জন দুষ্কৃতীকে ধাওয়া করেছিলেন বিদ্যুৎ। সেই ঘটনার সঙ্গে এই মৃত্যুর যোগ থাকতে পারে বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। এ দিন তাঁরা জানিয়েছেন, মৃতদেহ সৎকারের পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবেন।
এসিপি (দক্ষিণ) গুলাম সারোয়ার বলেন, ‘‘ওই যুবকের পরিবার চাইলে অভিযোগ দায়ের করতেই পারে। তবে প্রাথমিক ভাবে আমরা নিশ্চিত, এটি আত্মহত্যা। সুইসাইড নোটও মিলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy