Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিশু খুনের অভিযোগে গ্রেফতার মা ও প্রেমিক

শেখ রবিউল ও আজমিরা বেগমের বিয়ে হয় বছর পাঁচেক আগে। তাঁদের তিন সন্তান। স্বামীর সঙ্গে ঘর করার সময় থেকেই বাকসাড়া সুলতানপুরের বাসিন্দা শেখ আলাউদ্দিন নামে এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে আজমিরার।

ধৃত আজমিরা বেগম। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ধৃত আজমিরা বেগম। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে মা ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার দুপুরে হাওড়ার নাজিরগঞ্জের মোল্লাপাড়া নয়াবস্তি থেকে ধরা হয় তাঁদের। পুলিশ জানিয়েছে, চার দিন আগে রাতের অন্ধকারে মৃত ওই শিশুকে আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় মোল্লাপাড়ায় কবর দিয়ে গিয়েছিলেন ওই মহিলার প্রেমিক। ওই শিশুর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন সকালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর খুঁড়ে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরেই উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। অভিযুক্তের দুই আত্মীয়ের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরানো হয়। শিশুটিকে কবর দিতে সাহায্য করার অভিযোগে মারধর করা হয় ওই পরিবারের লোকজনকে। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ রবিউল ও আজমিরা বেগমের বিয়ে হয় বছর পাঁচেক আগে। তাঁদের তিন সন্তান। স্বামীর সঙ্গে ঘর করার সময় থেকেই বাকসাড়া সুলতানপুরের বাসিন্দা শেখ আলাউদ্দিন নামে এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে আজমিরার। পুলিশ জানায়, আলাউদ্দিনের মোট তিনটি বিয়ে। তা সত্ত্বেও মাস দুই আগে আজমিরা স্বামীকে ছেড়ে আড়াই বছরের শিশুপুত্র শেখ রহিমকে নিয়ে বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার কেটোপোলের কাছে একটি বাড়িতে আলাউদ্দিনের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিন ধরে আলাউদ্দিন আজমিরার সন্তানকে তার বাবার কাছে রেখে আসার জন্য চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ।

শেখ রবিউলের বক্তব্য, গত রবিবার আজমিরা ছেলেকে নিয়ে চলে যেতে বলেছিলেন। সেইমতো গত বুধবার তিনি ছেলেকে আনতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, আজমিরার কাছে গেলে তিনি জানিয়ে দেন, ছেলেকে নিয়ে আলাউদ্দিন পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ জানায়, এতে সন্দেহ হয় রবিউলের। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নাজিরগঞ্জের মোল্লাপাড়ায় আলাউদ্দিনের অনেক আত্মীয়স্বজন থাকেন। তাঁদের সাহায্যেই গত মঙ্গলবার আলাউদ্দিন ও আজমিরা মোল্লাপাড়ার নয়াবস্তির একটি কবরস্থানে ওই শিশুকে কবর দিয়ে এসেছেন।

রবিউল বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার আমি মোল্লাপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমার ছেলের বয়সী এক শিশুকে গত মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ কবর দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, যাঁরা মৃতদেহ দেখেছিলেন, তাঁরাই তাঁকে জানান বছর আড়াইয়ের শিশুটির মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে ছিল। মুখের বাঁ দিক ছিল ক্ষতবিক্ষত। এ কথা শোনার পরেই তিনি নাজিরগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন অর্থাৎ, শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ কবর থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার করলে রবিউল তাঁর ছেলেকে শনাক্ত করেন। এর পরেই এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে শেখ আলাউদ্দিনের আত্মীয়দের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ভাঙচুর হওয়া বাড়ির সামনে এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেছেন। সেখানে দাঁড়িয়েই শেখ সাদেক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আলাউদ্দিন এক জন দুষ্কৃতী। একাধিক বিয়েও করেছেন। ওঁর পক্ষে এই ধরনের কাজ করা অস্বাভাবিক নয়। কবর থেকে শিশুটিকে তোলার পরে সে কারণেই এলাকার লোকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন।’’

হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তবে ঠিক কী ভাবে
মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। যেহেতু শিশুটির বাবা খুনের অভিযোগ করেছেন, তাই আলাউদ্দিন ও আজমিরাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Crime Murder হাওড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE