Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
নদী দূষণ রুখতেও পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের

হাওড়ায় পিকনিক নিয়ে তিন নিষেধ

২০০৯ সালে কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের ধারে পিকনিকের সময়ে নৌকাবিহার করতে গিয়ে সলিল-সমাধি ঘটেছিল শিশু-সহ কয়েকজনের। তার পর থেকেই হাওড়ার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে চড়ুইভাতির মরসুমে নৌকাবিহার নিষিদ্ধ করে পুলিশ।

বিধি: ফুলেশ্বর বাংলোর সামনে নৌকাবিহারেও জারি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। ছবি: সুব্রত জানা

বিধি: ফুলেশ্বর বাংলোর সামনে নৌকাবিহারেও জারি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

নৌকাবিহার বন্ধ। প্রকাশ্যে মদ খাওয়া বন্ধ। ডিজে বাজানো বন্ধ।

হাল্কা ঠান্ডা পড়লেও পিকনিকের মরসুম এখনও শুরু হয়নি। তবে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই পিকনিক স্পটগুলিতে শনি, রবি-সহ ছুটির দিনগুলিতে ফিরে আসতে চলেছে সেই চেনা ছবি। আনন্দের সময়ে যাতে কোথাও কোনও বিপত্তি না-ঘটে এবং পরিবেশও রক্ষা পায়, সে জন্য হাওড়া জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ওই তিন বিধিনিষেধ আরোপ করল পুলিশ প্রশাসন।

২০০৯ সালে কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের ধারে পিকনিকের সময়ে নৌকাবিহার করতে গিয়ে সলিল-সমাধি ঘটেছিল শিশু-সহ কয়েকজনের। তার পর থেকেই হাওড়ার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে চড়ুইভাতির মরসুমে নৌকাবিহার নিষিদ্ধ করে পুলিশ। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এ বারেও পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে চড়ুইভাতিতে এসে নৌকাবিহার করা যাবে না।

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট থানার অফিসারদের বলা হয়েছে, অবিলম্বে নিজেরা বসে ঠিক করুন কী ভাবে নৌকা-বিহার বন্ধ করা যায়। ডিজে বাজানো এবং প্রকাশ্যে মদ্যপানেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও দুর্ঘটনা না-ঘটিয়ে মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে পিকনিক করতে পারেন, সেটাই নিশ্চিত করা হবে।’’

শীতের মরসুমে এই জেলায় গঙ্গার ধারের গড়চুমুক, গাদিয়াড়া, ফুলেশ্বর, দামোদরের ধারের মহিষরেখা, রূপনারায়ণের ধারে কোলাঘাটে পিকনিক জমে ওঠে। তবে, সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় গড়চুমুকে। গত বছর ১ জানুয়ারি প্রায় এক লক্ষ মানুষ এখানে এসেছিলেন। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেয়েছিল শ্যামপুর থানার পুলিশ। এ বার ইতিমধ্যেই সেখানে পিকনিকে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে ওই থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সন্ধে নামার আগেই পিকনিক-পর্ব সাঙ্গ করা। ভিড় সামলানোর জন্য অস্থায়ী ‘পুলিশ সহায়তা বুথ’ তৈরিরও আশ্বাস দিয়েছে থানা।

পিকনিক ঘিরে শব্দ-দূষণ এড়ানোর জন্য যে ভাবে ডিজে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে ভাবে নদী-দূষণ এড়াতেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি করেছে বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থা। বহু ক্ষেত্রেই চড়ুইভাতির পরে নদীপাড়ে খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং থার্মোকলের কাপ-থালা ফেলা হয়। সেগুলি শেষ পর্যন্ত বাতাসে উড়ে নদীতে গিয়েই পড়ে। কিন্তু এ সব ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগও উঠেছে আগে। গত বছরই মহিষরেখায় ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’ নামে একটি সংস্থার সদস্যেরা দামোদরের পাড়ে মহিষরেখায় চড়ুইভাতিতে ফেলে যাওয়া থার্মোকল তুলে নদী পরিষ্কার করেছিলেন। সমিতির অভিযোগ, গত বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চড়ুইভাতিতে আসা মানুষদের জন্য অস্থায়ী কিছু ভ্যাট করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। হয়নি মহিলাদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগারও। অথচ, শৌচাগারের অভাবে চড়ুইভাতিতে আসা মহিলারা বেশ অসুবিধায় পড়েন।

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় জানান, জেলার প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে চড়ুইভাতিতে এসে কেউ যাতে অসুবিধায় না-পড়েন, সে বিষয়ে করণীয় স্থির করতে জেলা পর্যায়ে মিটিং ডাকা হবে। বর্জ্য যাতে নদীতে ফেলা না-হয়, মহিলাদের অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ, ভিড়ের সময় যান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে পরিকল্পনা করা হবে।

এখন দেখার, পিকনিকের দিনগুলিতে কী ছবি দেখা যায় হাওড়ার ওই পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Tourist Spot Picnic হাওড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE