Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
শ্যামপুরের পর আমতাতেও আক্রান্ত পুলিশ

বাঁশ দিয়ে পেটানো হল এসআই-কে

রবিবার রাতে আমতার শাহচক গ্রামে পুলিশ গিয়েছিল একটি মারধরের মামলায় অভিযুক্তকে ধরতে। অভিযুক্তের পক্ষের লোকজনের হাতে আমতা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মফিজুল আলম প্রহৃত হন বলে অভিযোগ।

আক্রান্ত: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মফিজুল আলম।

আক্রান্ত: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মফিজুল আলম।

নুরুল আবসার ও সুব্রত জানা
আমতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:০৩
Share: Save:

শ্যামপুরের পর আমতা। দু’মাসের ব্যবধানে ফের হাওড়ায় অভিযুক্তকে ধরতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ।

একটি ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল করা নিয়ে একই পরিবারের দু’পক্ষের গোলমালে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে গত জানুয়ারিতে শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামে প্রহৃত হন ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টর। রবিবার রাতে আমতার শাহচক গ্রামে পুলিশ গিয়েছিল একটি মারধরের মামলায় অভিযুক্তকে ধরতে। অভিযুক্তের পক্ষের লোকজনের হাতে আমতা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মফিজুল আলম প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। ইটের ঘায়ে জখম হন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। রাতেই মফিজুলকে আমতা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার দুপুরে তিনি ছাড়া পান। হামলায় তিন মহিলা-সহ ছয় গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও যাকে ধরতে গিয়ে এই ঘটনা, সেই প্রদীপ ঘাঁটা সোমবার বিকেল পর্যন্ত অধরা।

শ্যামপুরের পরে এই ঘটনায় ফের পুলিশি ‘নেটওয়ার্ক’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রামীণ জেলা পুলিশেরই একাংশ মনে করছে, হামলা যে হতে পারে, সেই আগাম খবর পুলিশের কাছে ছিল না। না-হলে রাতে মাত্র দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে মফিজুল অভিযুক্তদের ধরতে যেতেন না। মফিজুল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘এটা একটা মামুলি মামলা। অভিযুক্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই খবর পেয়ে চটজলদি তাকে ধরতে যাওয়া হয়েছিল। তবুও পুলিশের যদি কোনও খামতি থাকে, তদন্ত করে দেখা হবে।’’

কী হয়েছিল রবিবার রাতে?

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহচকের ভজারাম ঘাঁটা থানায় অভিযোগে জানান, তাঁকে এবং স্ত্রী-মেয়েকে প্রতিবেশী প্রদীপ ঘাঁটা, শ্যামল ঘাঁটা-সহ ছ’জন মারধর করে। সে দিনই পুলিশ শ্যামলকে ধরে। বাকিদের ধরতে পারেনি। এর মধ্যে পুলিশের কাছে খবর আসে, প্রদীপ গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ভিত্তিতেই রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মফিজুলরা একটি মোটরবাইকে গ্রামে যান। তাঁরা প্রদীপকে বাড়ির কাছে ঘুরে বেড়াতে দেখে মোটরবাইক থেকে নেমে ধরতে যান। প্রদীপ চিৎকার করে পরিবার এবং গ্রামের লোকজনকে ডাকতে থাকে। গ্রামবাসীদের একাংশ বাঁশ, ইটের টুকরো, রড নিয়ে বেরিয়ে আসেন। পুলিশকে তাঁরা আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। সেই ফাঁকে প্রদীপ পালায়। পিছু হঠে কোনওমতে মোটরবাইকে চড়ে ঘটনাস্থল ছাড়েন মফিজুলরা। কিন্তু গোলমাল এখানেই থেমে থাকেনি।

পুলিশ নিগ্রহে অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হচ্ছে ।

পুলিশ পিছু হঠার পরে আর একদল গ্রামবাসী আক্রমণকারীদের উপরে ঝঁপিয়ে পড়েন। দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পাঁচটি বাড়ি এবং দু’টি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। এসডিপিও (উলুবেড়িয়া) রানা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গ্রামে পৌঁছনোর আগে বিবদমান গ্রামবাসীদের অধিকাংশ পালিয়ে যান।

গ্রামবাসীদেরই একটি অংশের দাবি, দু’পক্ষের সংঘর্ষে রাজনৈতিক রং রয়েছে। প্রদীপ এবং তার হয়ে যারা পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছিল, তারা বিজেপি সমর্থক। তাদের সঙ্গে যাদের সংঘর্ষ হয় তারা তৃণমূলের। পুলিশ অবশ্য গ্রামবাসীদের দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধের কথা স্বীকার করেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের নিজেদের মধ্যে মারপিটের কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ জানায়নি।’’

অভিযুক্তকে প্রদীপকে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে মেনে নিয়েছেন হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা বিজেপি-র সভাপতি অনুপম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘প্রদীপকে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে ধরে আনতে গিয়েছিল। সে জন্য গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের ছেলেরা আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে।’’ পক্ষান্তরে, জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘একান্তই গ্রাম্য বিবাদের জেরে ওই ঘটনা।’’

কিন্তু গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে বারবার পুলিশ কেন আক্রান্ত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Miscreants Amta আমতা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE