কারারক্ষীদের সঙ্গে বন্দিদের সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হুগলি জেল। প্রতীকী ছবি।
বছর দেড়েক পরে ফের তাণ্ডব, ফের মারধর, আগুন। ফের নাম জড়াল নেপু গিরি ও দলবলের। ঘটনাস্থলও সেই একই— হুগলি জেল। এ বার আক্রান্ত হলেন ডেপুটি জেলার বিশ্বরূপ সিংহ-সহ কয়েকজন কারারক্ষী এবং অন্তত ১৪ জন কয়েদি। বিশ্বরূপবাবুর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বুকের হাড়ও ভেঙে গিয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয় তাঁর অফিসেও।
হুগলি শিল্পাঞ্চলের ‘ত্রাস’ রমেশ মাহাতোর ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত নেপু গিরি দীর্ঘদিন ধরেই ওই জেলে রয়েছে। বুধবার নেপু ও তার সাত শাগরেদকে চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচারক ফের তাদের জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। বিকেলে তাদের ফিরিয়ে এনে কয়েদি গুনতির সময়েই নেপু নিজমূর্তি ধারণ করে বলে অভিযোগ। কেন তাকে সেখানে আনা হয়েছে, এই জবাবদিহি চেয়ে সে প্রথমে জেপুটি জেলার বিশ্বরূপবাবুকে মারধর করে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং ইট দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কারারক্ষীরা আটকাতে যান। নেপু ও তার জেলবন্দি শাগরেদরা জেলের বাগানের ইট নিয়ে কারারক্ষীদের দিকে ছুড়তে থাকে এবং তাঁদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ।
জেল সূত্রের খবর, এই তাণ্ডবের সময়ে পুলিশ যাতে কোনও ভাবে ঢুকতে না-পারে সে জন্য নেপুরা রান্নাঘর থেকে ডিজেল এনে জেলের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জেল কর্তৃপক্ষ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাজতে থাকে সাইরেন। চুঁচুড়ার আইসি নিরূপম ঘোষ বাহিনী নিয়ে এসে প্রথমে জেলের ভিতর ঢুকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের জেরে আটকে যান। খবর দেওয়া হয় দমকলে। দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। দুষ্কৃতীরা তাতেও বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত জেলে র্যাফ নামানো হয়। আসেন পুলিশ কমিশনার অজয় কুমারও। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাফ জেলের ভিতরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আলাদা সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নেপুকে।
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘কী কারণে ওই জেলে দুষ্কৃতীরা হামলা করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষের কারও কোনও গাফিলতি ছিল কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’
তবে, ওই জেলে নেপু ও তার দলবলে তাণ্ডব এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের ৩১ অগস্ট অন্য কয়েদিদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিল নেপু বাহিনী। সে বারও আগুন লাগানো হয়েছিল। তার আগের বছরই আবার জেলার দোরগোড়ায় বোমাবাজি করে কয়েদি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। বারবার একই জেলে এমন ঘটনায় শুধু ওই এলাকাতে আতঙ্কই নয়, প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy