Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাধ্যমিকের স্বপ্ন দেখছে উদ্ধার হওয়া শিশু শ্রমিক

সম্প্রতি শ্রম দফতর, পুলিশ, শিশু সুরক্ষা ইউনিট এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা সুগন্ধ্যার ওই কারখানায় হানা দিয়ে ওই দুই কিশোরকে উদ্ধার করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

বয়স ষোলোও পেরোয়নি। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি ছেড়ে রোজগারের টানে ভিন জেলায় চলে এসেছিল ছেলেটি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ফের পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন দেখছে সে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর ঘনারবন গ্রামে। এ বার তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। বাবা রংমিস্ত্রির কাজ করেন। সংসারে অভাব ছিলই। তার উপর আবার দিদি অসুস্থ হয়ে প়ড়ায় বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধান শুরু করেছিল ওই কিশোর। এক পরিচিতর মাধ্যমে সুগন্ধ্যায় নির্মীয়মাণ কারখানায় লোহা কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ মেলে। দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ। মজুরি দৈনিক সাড়ে তিনশো টাকা। সেখানেই ওই কিশোরের সহকর্মী ছিল মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাগডাঙা গ্রামের আর এক কিশোর। সেও নবম শ্রেণি পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়েছে। তার পরে অভাবে বাধ্য হয়েছে পড়া ছেড়ে দিতে।

সম্প্রতি শ্রম দফতর, পুলিশ, শিশু সুরক্ষা ইউনিট এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা সুগন্ধ্যার ওই কারখানায় হানা দিয়ে ওই দুই কিশোরকে উদ্ধার করেন। গত সোমবার তাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে (সিডব্লিউসি) হাজির করানো হয়। দু’জনেরই বাবা এসেছিলেন। সিডব্লিউসি-র নির্দেশে ছেলেদের তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মিনাখাঁর ছেলেটির বাবা জানান, ছেলেকে কাজে পাঠিয়ে ভুল করেছেন। সে যাতে পড়াশোনায় মন দেয়, সেটাই দেখবেন। ছেলেটিও বলে, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আপাতত সে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে। প্রশাসনের তরফে বাড়ির লোকজনকে বলা হয়, পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে তাঁরা যেন চাইল্ড লাইনে যোগাযোগ করেন। মুর্শিদাবাদের কিশোরের বাবা জানান, ছেলেকে হাতের কাজ শেখানোর চেষ্টা করবেন। সাবালক না হলে আর কাজে পাঠাবেন না।

কলকাতার কাছের জেলা হুগলিতে ছোটদের কাজে লাগানোর প্রবণতা যে বন্ধ হয়নি, উপরের ঘটনাই তার প্রমাণ। তবে শুধু সেখানেই নয়, জেলার বিভিন্ন ইটভাটা, হোটেল-সহ নানা জায়গায় আঠেরো বছরের কম বয়সি ছেলেমেয়েদের কাজে লাগানো হয় বলে অভিযোগ। চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ নানা জায়গা থেকে কম বয়সি বহু ছেলে ভিনরাজ্যে যায় সোনা-রুপোর কাজে। চাইল্ড লাইনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘আঠেরো বছরের আগে কাউকে কাজে লাগানো বেআইনি। এতে পড়াশোনা নষ্টের পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশ ধাক্কা খায়।’’

এক বছর আগে হায়দরাবাদে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে হুগলির সাত জন নাবালক শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন সংস্থার লোকজনের বক্তব্য, সংসারে অনটন এবং অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ।

হুগলি জেলা চাইল্ড লাইনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শ্রম দফতরের উদ্যোগে পোলবায় একটি ইটভাটাতেও হানা দিয়ে চার শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই এমন অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Pariksha Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE