Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জোগান দেবে রাজ্য স্ব-রোজগার নিগম

ছাত্রীদের ন্যাপকিন যন্ত্র হাওড়ার স্কুলে

বাগনানের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতা মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েরা শৌচাগারেই ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলছে। এটা ঠিক নয়। এগুলি নষ্ট করার উপায় বের করা দরকার।’’

উপায়: এই মেশিন থেকেই মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। নিজস্ব চিত্র

উপায়: এই মেশিন থেকেই মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

হাওড়া জেলায় মেয়েদের স্কুল এবং কো-এড স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন দিতে উদ্যোগী হয়েছে শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং যন্ত্র বসানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১০০টি স্কুলে যন্ত্রটি বসানোর তোড়জোড় চলছে। জেলায় মেয়েদের এবং কো-এড মিলিয়ে স্কুলের সংখ্যা প্রায় তিনশো। টাকা এলে বাকি ৫০টি স্কুলেও ওই যন্ত্র বসানো হবে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে জেলা সর্বশিক্ষা বিভাগ। ওই বিভাগের এক কর্তা জানান, সব স্কুলের জন্য টাকা একেবারে আসেনি। যখন যেমন টাকা এসেছে, তার ভিত্তিতে যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে যে সব স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি পর্যায়ক্রমে সেগুলিকেই যন্ত্র বসানোর জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভেন্ডিং যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হয়েছে অগস্ট মাসে। একটি পাঁচ টাকার কয়েন বা পাঁচটি এক টাকার কয়েন ভেন্ডিং যন্ত্রে ফেললেই তিনটি ন্যাপকিনের একটি প্যাকেট বেরিয়ে আসবে।

তবে, যে স্কুলগুলিকে প্রথম পর্যায়ে এই যন্ত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানকার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ইতিমধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেমন, বাগনানের মুগকল্যাণ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, অগস্ট মাসে দেওয়া সব ন্যাপকিন শেষ হয়ে গেলেও তা ফের মেলেনি। ভেন্ডিং যন্ত্র শূন্য। ফলে, ছাত্রীরা সমস্যায় পড়ছে।

জেলা সর্বশিক্ষা বিভাগের এক কর্তা জানান, প্রথমে যে ন্যাপকিনগুলি দেওয়া হয়েছিল তার জন্য স্কুলের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। ন্যাপকিন বিক্রি থেকে যে অর্থ মিলবে, সেগুলি যে সংস্থা যন্ত্র বসিয়েছে, তাদের কাছে জমা দিলে আবার ন্যাপকিনের প্যাকেট ভরে দেবে। ন্যাপকিনের অর্থ রাখা এবং তা সংগ্রহ করার জন্য প্রতিটি স্কুলে ছাত্রী-শিক্ষিকাদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ার কথাও বলা হয়েছে। সেই কমিটিই ন্যাপকিন কেনা থেকে শুরু করে ভেন্ডিং যন্ত্রেরও তত্ত্বাবধান করবে। যদিও মুগকল্যাণ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অনুভা মান্না বলেন, ‘‘প্রায় এক মাস ধরে যে সংস্থা ভেন্ডিং যন্ত্র বসিয়েছে, তাদের ফোন করছি। কিন্তু পাত্তা নেই।’’

ব্যবহৃত ন্যাপকিন কী ভাবে নষ্ট করা হবে, তা নিয়েও আতান্তরে পড়েছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাগনানের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতা মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েরা শৌচাগারেই ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলছে। এটা ঠিক নয়। এগুলি নষ্ট করার উপায় বের করা দরকার।’’

জেলা সর্বশিক্ষা বিভাগ থেকে অবশ্য ব্যবহৃত ন্যাপকিনগুলি পুড়িয়ে ফেলার জন্য যন্ত্র দেওয়ার কথা স্কুলগুলিকে জানানো হয়েছে। এগুলি বিনামূল্যেই বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে, বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে স্কুলকেই। অনেক স্কুল সেই দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না। অনুভাদেবী এবং সুলতাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের টাকা কোথায়? এই টাকা স্কুল শিক্ষা দফতরকে দিতে হবে।’’

ন্যাপকিনের অনিয়মিত জোগান দূর করতে অবশ্য এগিয়ে এসেছে রাজ্য স্বরোজগার নিগম। তারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দিয়ে ন্যাপকিন বানাবে। নিগমের চেয়ারম্যান পুলক রায় জানান, হাওড়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ন্যাপকিন বানানোর যন্ত্র বসাতে টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বানানো ন্যাপকিন নিগমই কিনে নিয়ে তা স্কুলগুলিকে সস্তায় বিক্রি করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary napkin Machine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE