রাস্তায় লাগানো একের পর এক টুরিস্ট লজের বিজ্ঞাপন। কিন্তু দেখা নেই পর্যটকের। যাত্রীর আশায় বসে ভ্যান চালক। নিজস্ব চিত্র
গায়ে পর্যটন কেন্দ্রের তকমা। কিন্তু কোথায় পর্যটক! হাওড়ার গাদিয়াড়া দিন দিন যৌনপল্লিতে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন এলাকাবাসী।
কলকাতার সোনাগাছি বা হাড়কাটা গলির মতো যৌনপল্লির সঙ্গে গাদিয়াড়া অবশ্য দৃশ্যত মেলে না। এখানে যৌনকর্মীরা খদ্দেরের আশায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন না। সেই কাজটি করেন বেশিরভাগ হোটেল-লজের কর্মীরা। রাস্তা থেকে চোখের ইশারায় তাঁরা খদ্দের ডাকেন। হোটেল-লজে ঢুকলেই মেলে যৌনকর্মী। আর এই অবাধ দেহব্যবসার সঙ্গে প্রায়ই উঠছে দুষ্কর্মের অভিযোগও।
প্রায় ৩০ বছর আগে হুগলি এবং রূপনারায়ণ নদের সঙ্গমস্থলে তৈরি হয়েছিল জেলার অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্রটি। এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, পর্যটকের ঢল নামবে। এলাকার অর্থনীতির উন্নতি হবে। কিন্তু কোথায় কী! স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাঁদের। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, কখন কী দুষ্কর্ম হয়, সেই ভয়ে তাঁদের সিঁটিয়ে থাকতে হয়।
বছর তিনেক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এক নাবালিকাকে এখানে এনে বিক্রির চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় হোটেল-মালিককে। তারপর থেকে এখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। মাসছয়েক আগে একটি লজে এক নাবালিকাকে এনে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। কিছুদিন আগে আর একটি লজে এক মহিলাকে আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান তাঁর স্বামী। সূত্রের খবর, এ সব ছাড়াও অনেকে এইসব হোটেলে ঢুকে সর্বস্ব খোয়ান। তাঁদের কাছ থেকে ঘড়ি, টাকা-পয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সম্মানহানির ভয়ে তাঁরা থানা-পুলিশ করেন না।
এখানে সরকারি লজ রয়েছে মাত্র একটি। বাকি সব বেসরকারি লজ-হোটেল। কয়েকটি লজ-হোটেল ছাড়া সবগুলিতে রমরমিয়ে দেহব্যবসা চলে বলে অভিযোগ। এমনই একটি হোটেলের মালিক এ জন্য সরকারকেই দুষছেন। তাঁর খেদ, ‘‘সরকার গাদিয়াড়ার উন্নয়নে কিছুই করেনি। তাই পর্যটক আসে না। আমাদের ব্যবসা চলবে কী ভাবে? বাধ্য হয়েই এই কারবার করতে হচ্ছে।’’
গাদিয়াড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত রাস্তা নদীবাঁধের উপরে। রাস্তার দু’ধারে আগাছার জঙ্গল। এর মধ্যেই পর পর হোটেল-লজ। বেলা ১০টা থেকেই খদ্দের আসতে শুরু করেন। অচেনা খদ্দেরদের ডাকার জন্যই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন হোটেল-কর্মীরা। পর্যটকেরা কার্যত ঘেঁষেন না বললেই চলে। একটি নামী হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের হোটেলে দেহব্যবসা হয় না। ফলে, তাঁরা পর্যটক পান। কিন্তু তাঁদের হোটেলে জায়গা না-থাকলে পর্যটকদের থাকার আর কোনও ভাল বেসরকারি হোটেল নেই। ফলে, সেই পর্যটকদের ফিরে যেতে হয়। ওই হোটেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাকি যে সব হোটেল আছে সেখানে চলছে অসাধু কাজ। তাতেই লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার হচ্ছে। অপেক্ষা করে সততার সঙ্গে ব্যবসা করার ধৈর্য নেই ওই সব হোটেলের লোকজনের। সেই কারণেই পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গাদিয়াড়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠল না।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অবাধে অসাধু কাজকর্ম চলছে হোটেলগুলিতে। দালালদের হাত ধরে এখানে আসেন যৌনকর্মীরা। অনেক নাবালিকাকেও এখানে বিক্রি করা হয়। প্রতিকার নেই দেখে তাঁরাও আর প্রতিবাদ করেন না। সন্ধ্যার পরে এলাকায় কার্যত নৈরাজ্য চলে।
এখানকার হোটেলগুলিতে লঞ্চে করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নূরপুর থেকেও অনেক যুবক আসেন। গাদিয়াড়া জেটিঘাটের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ওই যুবকদের একাংশ ফেরার সময়ে মদ্যপ অবস্থায় নানা অভব্যতা করেন। অনেক অনুরোধে শ্যামপুর থানা একজন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করলেও তিনি কদাচিৎ আসেন।
কী বলছে পুলিশ প্রশাসন?
অভিযোগ মানতে চাননি গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁদের দাবি, গাদিয়াড়ায় কড়া নজরদারি চলে। জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘গাদিয়াড়াকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড। রাস্তায় আলো দেওয়া হবে। এ বার গাদিয়াড়ার ভোল পাল্টে যাবে।’’
সেই আশাতেই অপেক্ষায় এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy