Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীদের ন্যাপকিন, নজির হুগলির হরিপালের গ্রামের স্কুলের

হরিপালের প্রত্যন্ত এলাকা চিত্রশালীর গজা উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনশো। এলাকাটি আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া।

সচেতনতা: স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপযোগিতা বোঝাতে শিবির হরিপালের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সচেতনতা: স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপযোগিতা বোঝাতে শিবির হরিপালের স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী
হরিপাল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

বছরের শেষে এসে জেলার সব স্কুলের ছাত্রীদের নিখরচায় স্যানিটারি ন্যাপকিন দিতে উদ্যোগী হল হুগলি জেলা প্রশাসন। স্কুলে স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং যন্ত্র বসাতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হরিপালের একটি গ্রামের স্কুল অবশ্য নিজেদের উদ্যোগে ছাত্রীদের জন্য ন্যাপকিন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে গত অগস্টেই। সচেতনতা বাড়ায় ওই স্কুলের ছাত্রীদের মা-দিদিরাও চাইছেন, স্কুল থেকে তাঁদেরও ন্যাপকিন দেওয়া হোক।

হরিপালের প্রত্যন্ত এলাকা চিত্রশালীর গজা উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনশো। এলাকাটি আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। স্কুলের বেশিরভাগ পড়ুয়াই তফসিলি জাতি-উপজাতি বা সংখ্যালঘু পরিবারের। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মেয়েদের অনেকের মধ্যেই তেমন সচেতনতা ছিল না। অনেকে সংক্রমণের সমস্যাতেও ভুগেছে। কাজেই স্কুল থেকে ন্যাপকিন নিতে মেয়েদের মধ্যে জড়তা থাকবে কিনা, অভিভাবকেরা কতটা সাড়া দেবেন, তা নিয়ে প্রথমে সংশয়েই ছিলেন বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সমস্যা মিটল কী ভাবে?

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ছাত্রীদের জড়তা কাটাতে ব্লক প্রশাসনের তরফে ‘অন্বেষা’ প্রকল্পে কাউন্সেলিংয়ের সময় বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়। শিক্ষিকাদের তরফে কলকাতার বালিগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে মেয়েদের এবং তাদের মা-দিদিদের বোঝানো হয়। এ ভাবে লজ্জা-সঙ্কোচ কাটে। তার পরেই ন্যাপকিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা সাথী গায়েন বলেন, ‘‘এখন ছাত্রীদের মা-দিদিরাও আমাদের কাছে এসে ন্যাপকিন চাইছেন।’’ প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ জানান, ন্যাপকিনের চাহিদা বাড়ার বিষয়টি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে জানানো হয়েছে। এখানে যা করার ওরাই করে।

নবম শ্রেণির পড়ুয়া নবমিতা নন্দী, মানসী কর্মকাররা বলে, ‘‘দিদিমণিদের কাছে সহজেই সব বলা যায়। স্কুলে ঋতুস্রাব হলে আর বাড়ি ফিরে যেতে হয় না।’’ শ্রাবণী নন্দী নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘স্কুল থেকে ন্যাপকিন দেওয়ায় ওদের খুব উপকার হচ্ছে। এ ভাবে আমাদের দিলেও ভাল হয়। দোকানে গিয়ে পুরুষ-বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে লজ্জা লাগে।’’

এই স্কুলে অবশ্য হাতে হাতেই ন্যাপকিন দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে স্কুলে স্কুলে ভেন্ডিং যন্ত্র বসাতে। স্কুল শিক্ষা দফতরের গড়িমসিতেই এতদিন এই ব্যবস্থা চালু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ৯০টি বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ওয়ার্ক-অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শ্রাবণী ধর বলেন, “আশা করছি শীঘ্রই ভেন্ডিং মেশিন এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন নষ্ট করার যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে ৯০টি স্কুলে। বাকিগুলির ক্ষেত্রেও শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে।”

এই উদ্যোগে ছাত্রীদের যে বিশেষ সুবিধা হবে, তা মানছেন সব স্কুলের কর্তৃপক্ষই। এখনও বহু স্কুলে ছাত্রীদের ঋতুস্রাব শুরু হলে তাদের বাড়ি পাঠানো ছাড়া উপায় থাকে না। জাঙ্গিপাড়ার নিলারপুর রাজা রামমোহন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক গৌতম বালি বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশমতো ওই যন্ত্র বসানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে স্কুলে।’’

শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা সুতপা দত্ত বলেন, ‘‘কখনও কখনও ন্যাপকিন প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে স্কুলে সচেতনতা শিবির করে বিনামূ‌ল্যে ন্যাপকিন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়মিত এমন কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ভেন্ডিং মেশিন বসলে খুব ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Haripal School Sanitary napkin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE