তদন্ত: উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ। নিজস্ব চিত্র
অনলাইনে অর্ডার দেওয়া হয়েছে দামি ফোন। অথচ সেই কোম্পানি থেকে যে প্যাকেট পাঠাল, তাতে মিলল ইট। এমন অভিযোগ নতুন নয়। এ বার তেমনই অভিযোগ পেয়ে অনলাইন শপিং সংস্থার তিন কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। উদ্ধার হল ল্যাপটপ-মোবাইল। হুগলির শ্রীরামপুরের ঘটনা।
বিষয়টি পুলিশের নজরে এনেছিল সংশ্লিষ্ট অনলাইন শপিং সংস্থাই। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখল, ভূত সর্ষের মধ্যেই! বজ্র আঁটুনির মধ্যে থেকেই ফাঁক খুঁজে দামি নানা জিনিস চুরির অভিযোগে সংস্থারই তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হল। ধৃতদের নাম শুভজিৎ ওঁরাও, সোমনাথ ভাদুড়ি এবং দীপঙ্কর দাস। পুলিশ জানিয়েছে, শুভজিতের বাড়ি ভদ্রেশ্বরে, দীপঙ্কর বলাগড় আর সোমনাথ মানকুণ্ডুর বাসিন্দা। এ দিন ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দ্রুত ঘটনার কিনারা এবং চোরাই জিনিস উদ্ধার করা গিয়েছে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই সংস্থার আরও খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।’’
শ্রীরামপুরের সিমলায় দিল্লি রোডের পাশে ওই সংস্থার গুদাম থেকে সামগ্রী প্যাকেটবন্দি করে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশ ও সংস্থা সূত্রের খবর, সম্প্রতি গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছিল, যে জিনিসের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে, তা মিলছে না। কখনও প্যাকেট খুলে মিলছে পাথর, কখনও নকল বা কম দামি কোনও জিনিস। সংস্থার আধিকারিকদের সন্দেহ হয়, গুদাম থেকেই সামগ্রী খোওয়া যাচ্ছে। এরপর গত ১১ নভেম্বর সংস্থার তরফে শ্রীরামপুর থানায় এফআইআর করা হয়।
অনলাইন সংস্থার অফিসের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
তদন্তে নেমে গুদামের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখেন চন্দননগর কমিশনারেটের অফিসাররা। সেই সূত্র ধরে গুদামের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে তদন্তকারীদের মনে হয়েছিল, চুরির সঙ্গে ভিতরের লোকই যুক্ত। কারণ, নিরাপত্তার কড়াকড়িতে বাইরের লোকের পক্ষে কিছু নিয়ে সেখান থেকে বেরনো কার্যত অসম্ভব। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই তিনজন অন্য বিভাগের কর্মী হয়েও ঘনঘন প্যাকেজিং বিভাগে যাতায়াত করছে। তাদের হাতে ব্যাগও থাকছে। এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে কর্মীরা অবাধেই যাতায়াত করতে পারেন। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তরা সেই সুযোগই কাজে লাগায়। পরে হাত সাফাই করে তারা আসল জিনিস বাইরে পাঠিয়ে দিত।
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা জেরায় দোষ স্বীকার করেছে। বুধবার রাতে ধৃতদের বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, ২টি আইফোন-সমেত ৪টি মোবাইল, কম্পিউটারের একটি মাদার বোর্ড, একটি পেন ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। সবগুলিই অব্যবহৃত। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই জিনিসগুলির মধ্যে কয়েকটি সামগ্রী খোলা বাজারে মেলে না। অনলাইনেই পাওয়া যায়। সবগুলিই সিমলার ওই সংস্থার গুদাম থেকে সরানো হয়েছিল।’’
বৃহস্পতিবার গুদামে গিয়ে দেখা গেল, কাজ সেরে বেরনোর সময় একাধিক বার মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে কর্মীদের শরীর তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে ঘটনার বিষয়ে সংস্থার কেউ মুখ খুলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy