Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
জয়পুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ভাঙল মন্দির

দু’জনের মৃত্যু ‘চূড়া’য় চাপা পড়ে

শ্মশানকালী পুজোর জন্য শনিবার সন্ধ্যায় হাওড়ার জয়পুরের এক মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বহু গ্রামবাসী। কিন্তু কয়েক মিনিটের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে সেই জায়গায় নেমে এল শ্মশানের স্তব্ধতা। মন্দিরের ‘চূড়া’ ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয় এক বালক এবং এক মহিলার। আহত অন্তত ১৪ জন পুণ্যার্থী।

অভিজিৎ মাঝি এবং নমিতা রায়। ফাইল চিত্র

অভিজিৎ মাঝি এবং নমিতা রায়। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৪
Share: Save:

শ্মশানকালী পুজোর জন্য শনিবার সন্ধ্যায় হাওড়ার জয়পুরের এক মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বহু গ্রামবাসী। কিন্তু কয়েক মিনিটের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে সেই জায়গায় নেমে এল শ্মশানের স্তব্ধতা। মন্দিরের ‘চূড়া’ ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয় এক বালক এবং এক মহিলার। আহত অন্তত ১৪ জন পুণ্যার্থী।

জয়পুরের দক্ষিণ কাঁকরোল গ্রামের পূর্বপাড়ায় ওই দুর্ঘটনার পরে আহতদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় অমরাগড়ি বি বি ধর হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঁচ জনকে পাঠানো হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তিন জনকে পাঠানো ক‌লকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। কোনওমতে পুজো সেরে ওই রাতেই প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেন উদ্যোক্তারা। মৃতেরা হলেন ওই গ্রামের নমিতা রায় (২৫) এবং অভিজিৎ মাঝি (৯)।

একতলা মন্দিরটি তৈরি হয় বছর তেরো আগে। চূড়া বলতে যা বোঝায়, মন্দিরের যে অংশটি ভেঙে পড়ে, সেটি অবশ্য তেমন নয়। মন্দিরে ছাদের সামনের দিকে দু’ফুট উঁচু এবং ১২ ফুট চওড়া ইটের গাঁথনি করা পাঁচ ইঞ্চির দেওয়াল। সামনের দিকটি প্লাস্টার করা। তাতে লেখা ছিল ‘দক্ষিণ কাঁকরোল বারোয়ারি শ্মশানকালী পুজো কমিটি’র নাম। গ্রামবাসীদের মুখে অবশ্য মন্দিরের ওই অংশটি ‘চূড়া’ই।

কিন্তু কী ভাবে সেটি ভেঙে পড়ল?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজো উপলক্ষে মন্দিরের সামনে বিশাল মণ্ডপ করা হয়েছিল। এর একটি অংশ মন্দিরের ‘চূড়া’র সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝড় ওঠে। তখন পুজোর প্রস্তুতি চলছে। প্যান্ডেলে শ’খানেক লোক। বেশিরভাগই নাবালক। ঝড়ে প্যান্ডেল ফুলে ওঠে। তার ফলে মন্দিরের সঙ্গে বাঁধা অংশে টান ধরে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ‘চূড়া’টি। ঝড় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিং হয়ে যায়। বারোয়ারি কমিটির লোকজন জেনারেটর চালিয়ে উদ্ধারকাজ চালান। পুলিশ আসে।

বারোয়ারি কমিটির সম্পাদক বিভাস রায় বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে পুজো করছি। এমন দুর্ঘটনা কখনও ঘটেনি। দুর্ঘটনার পরে ধুমধাম করে পুজো করার মানসিকতা আর ছিল না। কোনওমতে পুজো সেরে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দিই।’’

ওই সন্ধ্যায় নমিতা রায় মন্দিরে গিয়েছিলেন পুজোর ভোগ দিতে। কথা ছিল পুজো শেষে প্রসাদ নিয়ে ফিরবেন। বদলে বাড়িতে ফিরল তাঁর নিথর দেহ। ‘চূড়া’র ভেঙে পডা় চাঙড়ের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। নমিতার দাদা অজিত রায় বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে বোনই ভোগ নিয়ে যায় প্রতি বছর। কিন্তু এ বছর কী যে হল! দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মন্দির চত্বরে গিয়ে দেখি দলা পাকিয়ে রয়েছে বোনের দেহ। কোনও মতে চাঙড় সরিয়ে দেহ উদ্ধার করি।’’

অভিজিৎ ওই সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে প্রথমে গিয়েছিল পাশের গ্রামের চড়কতলায় ঝাঁপ দেখতে। সেখান থেকে সে আসে মন্দিরের সামনে। নমিতার মতো সে-ও ঘটনাস্থলে মারা যায়। রবিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে বাবা প্রফুল্ল বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কোনও মতে তিনি বলেন, ‘‘মন্দিরে আমাদের রাতে যাওয়ার কথা ছিল। ও একাই বন্ধুদের সঙ্গে আগে চলে যায়। সব শেষ।’’

এ দিন দুর্ঘটনা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় জটলা ছিল গ্রামবাসীর। আহতদের নিয়ে তাঁদের পরিবারের লোকজনের মুখে চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। মন্দিরটির পাশে ডাঁই করে রাখা রয়েছে ‘চূড়া’র ধ্বংসাবশেষ। সকালে গ্রামে আসেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র। এই গ্রামটি তাঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে।
হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Temple Nor'westers Pilgrims
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE