Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জেরায় অপরাধ কবুল

টোটো-চালক খুনে গ্রেফতার চুঁচুড়ার যুবক

পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধের কথা কবুল করে রিন্টু জানিয়েছে, বকেয়া টোটো-ভাড়া নিয়ে ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে তার বিবাদ চলছিল। সেই আক্রোশ মেটাতে এবং ওই টোটো বিক্রি করে নিজের ধার শোধ করতে সে সৈয়দকে বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে নিয়ে গিয়ে লোহার রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে।

ধৃত: রিন্টু কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

ধৃত: রিন্টু কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

আগেই তাকে আটক করেছিল পুলিশ। চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলির টোটো-চালক শেখ সৈয়দ আলিকে খুনের অভিযোগে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হল স্থানীয় যুবক রিন্টু কুণ্ডুকে। পুলিশের দাবি, জেরায় অপরাধের কথা কবুল করে রিন্টু জানিয়েছে, বকেয়া টোটো-ভাড়া নিয়ে ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে তার বিবাদ চলছিল। সেই আক্রোশ মেটাতে এবং ওই টোটো বিক্রি করে নিজের ধার শোধ করতে সে সৈয়দকে বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে নিয়ে গিয়ে লোহার রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে।

বুধবার রাতে টোটো নিয়ে বেরিয়ে আর ফেরেননি পাঙ্খাটুলির বিবিরবাগান মিত্র গলির বাসিন্দা শেখ সৈয়দ। বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্রগড়ের একটি বাঁশবাগান থেকে সৈয়দের ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। মেলে টোটোটিও। প্রথম থেকেই পাঙ্খাটুলির কাবেরীপাড়ার বাসিন্দা, বছর সাতাশের রিন্টুকে সন্দেহ করছিলেন নিহতের পরিবারের লোকজন। তাঁরা জানতেন, বকেয়া ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে শেখ সৈয়দের মনোমালিন্য চলছিল। ওই যুবক হুমকিও দিয়েছিল। বুধবার রাতে রিন্টুকে ওই টোটোয় দেখা গিয়েছিল বলেও তাঁরা জানতে পারেন। সে-ও ওই রাতে ফেরেনি। সে কথা পুলিশকে জানান নিহতের বাড়ির লোক। পুলিশ রিন্টুকে আটক করে। শুরু হয় জেরা। তাতেই সে ভেঙে পড়ে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘মামলাটি নাদনঘাট থানায় চলছে। ওই থানার পুলিশ এসে রিন্টুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।’’ নাদনঘাট থানার তদন্তকারীরা জানান, রিন্টুর মোবাইল ঘটনার রাতে কালনা, পূর্বস্থলীর নানা এলাকায় ছিল। ওই রাতে সমুদ্রগড় বাজারে একটি সিসিটিভি ফুটেজে একটি টোটোতে দু’জনকেই দেখা যায়। নাদনঘাটের এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই ফুটেজের কথা বলার পরেই রিন্টু খুনের কথা কবুল করে।’’ ধৃতকে শনিবার কালনা মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

জেরায় কী বলেছে রিন্টু?

তদন্তকারীদের দাবি, রান্নাঘরের চিমনি সরবরাহ এবং সারানোর কাজ করত রিন্টু। সেই সূত্রে বহুবার সে শেখ সৈয়দের টোটো ব্যবহার করেছে। কিন্তু ভাড়া মেটায়নি। এ নিয়ে দু’জনের বিবাদ চলছিল। জুয়া-সহ নানা ব্যাপারে বাজারে রিন্টুর ধারও হয়ে গিয়েছিল। তাই সে শেখ সৈয়দকে খুনের পরিকল্পনা করে। বুধবার বিকেলে সে সৈয়দকে ফোনে ওই টোটো করে নবদ্বীপে মাল আনতে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু অত দূর যেতে ব্যাটারির চার্জ থাকবে না, এই আশঙ্কায় সৈয়দ প্রথমে রাজি হনি। রিন্টু সমুদ্রগড়ে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে চার্জ দিয়ে নেওয়ার কথা বলে তাঁকে রাজি করিয়ে নিয়ে যায়।

তার পরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার অছিলায় সমুদ্রগড়ের ওই বাঁশবাগানের সামনে টোটো দাঁড় করায় রিন্টু। বাঁশবাগানে ঢুকে যাওয়ার পরে জলের বোতল আনতে বলে সে শেখ সৈয়দকে ডাকে। তিনি যেতেই সঙ্গে থাকা লোহার রেঞ্জ দিয়ে রিন্টু তাঁর মাথায় আঘাত করে। শেখ সৈয়দ লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান। কেউ যাতে তাঁকে চিনতে না পারেন, সে জন্য স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে তাঁর মুখ ক্ষতবিক্ষত করে দেয় সে। এর পরে টোটোটি ওই বাগানে ঢুকিয়ে রেখে সে এলাকা ছাড়ে।

রিন্টু অপরাধের কথা স্বীকার করেছে জানতে পেরে নিহতের স্ত্রী তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ও বিশ্বাসঘাতকতা করল। আমার সংসারটা ভেসে গেল। দুই ছেলেকে নিয়ে কী করে চালাব জানি না।’’ রিন্টুর ঠাকুমা সবিতা কুণ্ডু বলেন, ‘‘নাতি ব্যবসা করত জানি। ব্যবসা করতে গেলে ধার-দেনা সকলেই করে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে বুঝিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE