মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার উন্নয়নে কেন্দ্রের বিশেষ প্রকল্প ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান (আইএপি)-এর কাজ চলছে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে। কিন্তু আগের টাকা খরচ হয়ে গেলেও প্রকল্পের পরবর্তী বরাদ্দ মেলেনি। আর তা নিয়েই প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। ‘আইএপি’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও খবর নেই। তাই প্রশ্ন উঠছে তবে কি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর? তবে এই মর্মে জেলা প্রশাসনের কাছে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা শুধু বলেন, “এই প্রকল্পে আমাদের কাজ ভাল হয়েছে। টাকাও খরচ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর টাকা মেলেনি।”
মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় উন্নয়নে ২০১০-১১ অর্থবর্ষ থেকে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল। স্থায়ী এবং চোখে দেখা যায়, এমন পরিকাঠামো নির্মাণের নির্দেশ রয়েছে আইএপি-তে। নিয়মমাফিক প্রতি আর্থিক বছরে তিন ধাপে ৩০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্য মেলার কথা। শর্ত অনুযায়ী, প্রাপ্য অর্থের ৬০ শতাংশ ব্যয় করতে পারলেই পরের কিস্তির টাকা আসে। একটি আর্থিক বছরের একশো শতাংশ খরচ করতে পারলেই পরের বছরের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শুরু থেকেই এই প্রকল্পে বরাদ্দ পেয়ে এসেছে। হঠাৎ ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে মাত্র ১০ কোটি টাকা পায়। সে টাকার ৬০ শতাংশ খরচ করলেও বাকি টাকা এখনও মেলেনি! এমনকী ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এই অর্থ বর্ষেরও কোনও টাকাই পায়নি।
ভারতের ১০টি রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত ৮৮টি জেলায় আইএপি-তে কাজ চলছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলা রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি ব্লক মাওবাদী প্রভাবিত হিসেবে চিহ্নিত। ২০১০ সালে জেলা এই প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা পেয়েছিল। পরের দু’টি আর্থিক বছরে ৩০ কোটি করে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে প্রথম কিস্তিতে মেলে ১০ কোটি টাকা। তারপর থেকে আর কোনও টাকা আসেনি। জেলা প্রশাসনের দাবি, এই প্রকল্পে গত ৪ বছরে মোট ৯৫ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। সুদ-সহ যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৮৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা অর্থাৎ ৯০.৬৫ শতাংশ অর্থই খরচ হয়ে গিয়েছে। বরাদ্দ টাকায় ২৩০০টি প্রকল্পের মধ্যে ২১৮৮টি অর্থাৎ ৯৫.১৩ শতাংশ কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে মার্কেট শেড, ছাত্রাবাস, কমিউনিটি হল। তবু পরের ধাপের অর্থ এখনও মেলেনি।
এই ঘটনায় নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রশাসনের মধ্যে। প্রশাসনিক কর্তাদের আশঙ্কা, তাহলে এ রাজ্যের জেলাগুলিকে মাওবাদী উপদ্রুত তালিকা থেকে বাতিল করে দেওয়া হবে না তো? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই বলে আসছেন, রাজ্যে আর মাওবাদী সমস্যা নেই। শান্ত জঙ্গলমহল হাসছে। যদিও জঙ্গলমহলে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীও রয়েছে। যদি জঙ্গলমহলে মাওবাদী সমস্যা না থাকে তা হলে এই অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সহায়তা মিলবেই বা কেন? এটা তো মূলত, উন্নয়নকে হাতিয়ার করে মাওবাদী দমনের জন্যই দেওয়া হয়েছিল। তা হলে কী এবার মাওবাদী উপদ্রুত তালিকা থেকে এ রাজ্যের জেলাগুলি বাদ যেতে পারে! টাকা না মেলায় এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলা খরচের নিরিখে প্রাপ্য অর্থ পেয়ে গিয়েছে। বাদ গিয়েছে কেবল পশ্চিমবঙ্গ।
এই টাকা পেতে আবেদন জানানোরও প্রয়োজন নেই। অনলাইনে নিয়মিত হিসেব দিলে বরাদ্দ চলে আসে। ফলে আশঙ্কা যাচ্ছে না। অন্য তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের অভিযোগ, এটা নিয়ে রাজনীতি করছে কেন্দ্রে থাকা বিজেপি সরকার। উন্নয়নকে ধাক্কা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রাপ্য বরাদ্দ দিচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy