Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
চন্দ্রকোনায় অভিযোগ বিডিওকে

কাজে যোগ দিতে বাধা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে

সরকারি নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও কাজে যোগ দিতে পারছেন না এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভগবন্তপুর ১ পঞ্চায়েতের পাছামী গ্রামের ঘটনা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা প্রতিমা অধিকারী দফতরের সংরক্ষিত পদে ওই চাকরিটি পেয়েছিলেন প্রায় আড়াই মাস আগে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

সরকারি নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও কাজে যোগ দিতে পারছেন না এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভগবন্তপুর ১ পঞ্চায়েতের পাছামী গ্রামের ঘটনা। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা প্রতিমা অধিকারী দফতরের সংরক্ষিত পদে ওই চাকরিটি পেয়েছিলেন প্রায় আড়াই মাস আগে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সমস্ত সরকারি নিয়মকানুন মেনেই চাকরি পেয়েও কর্মস্থলে ঢুকতে পারেননি। এ বিষয়ে ব্লক সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক, বিডিও-কে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন প্রতিমাদেবী।

তাঁর দাবি, “প্রথমে নিয়োগপত্র ছিড়ে ফেলতে বলেছিল গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। গালিগালাজ, হেনস্থা— সবই করেছেন। সহ্য করেছি। আমার চাকরিটা খুব দরকার।” তবে অভিযোগ, গ্রামের বাসিন্দারা বাধা দিলেও পিছনে শাসক দলেরই ইন্ধন রয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি রাকেশ সরকার ও পঞ্চায়েতের উপ প্রধান আরমান আলির প্রত্যক্ষ মদতেই এ সব হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ কথা স্বীকারও করেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসীর সরাসরি বলেছেন, ‘‘ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এ কাজ করতে হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করলে কোনও লাভ হবে না। এলাকায় থাকতে হলে নেতাদের নির্দেশেই কাজ করতে হবে।”

ওই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অমিতাভ কুশারীর অনুগামী বলে পরিচিত রাকেশ সরকার ও আরমান আলি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের ব্লক কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ওই মহিলা স্থানীয় নেতাদের না জানিয়েই কাজ জোগাড় করে নিয়েছিলেন। তাই গ্রামবাসীদের দিয়ে হেনস্থা করানো হচ্ছে তাঁকে।” ব্লক শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক শশিকান্ত রামতেক অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “পুলিশি নিরাপত্তায় প্রতিমাদেবীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার হবে।” চন্দ্রকোনা-২ বিডিও গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যও বলেন, “আমি পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দিয়েছি। কাজ না হলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারী দাবি করেছেন, বিষয়টি দু’একদিন আগেই শুনেছেন তিনি। ওই মহিলা চাকরিতে যোগ দিতে সবরকম সাহায্যই করা হবে। তবে তাঁর সাফ কথা, ‘‘এতে দলের কেউ জড়িত নয়।” অন্য দিকে তৃণমূলের ভগবন্তপুর ১ অঞ্চল সভাপতি রাকেশ সরকার ও উপ-প্রধান আরমান আলিরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁদের দাবি, কেন গ্রামবাসীরা ওই কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

প্রশাসন স্থানীয় সূত্রের খবর, সুসংহত শিশুবিকাশ দফতরের কর্মী, সহায়িকা-সহ অনান্য পদে চাকরির ক্ষেত্রে সরকারি ভাবেই ‘হোম কোটা ও অনান্য’ চালু আছে। যে ব্লকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে, সেখানে মোট পদের পাঁচ শতাংশ ওই কোটায় সরাসরি নিয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন দফতরের মন্ত্রী ও অধিকর্তারা। কয়েকমাস আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে মোট ৭২ জন কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির পদ্ধতি মেনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর তৈরি হয় প্যানেল। ‘হোম কোটা’তে কেউ চাকরি পেলে পদের জন্য যাবতীয় সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ওই সব সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার পর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে দফতরের অধিকর্তা চাকরির অনুমোদন দেন। আর নিয়োগপত্র দেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক। মূলত, সরকারি বা বেসরকারি হোমে যে সমস্ত মহিলারা থাকেন তাঁদের কথা ভেবেই ওই ‘হোম কোটা’ চালু হয়েছিল। বেশ কয়েকবছর আগে পরিবর্তিত নাম হয় ‘হোম কোটা ও অন্যান্য’। এর ফলে হোমের মহিলারা ছাড়াও সাধারণ বাড়ির মহিলারাও ওই কোটায় চাকরি পাচ্ছেন।

চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের পাছামী গ্রামের বছর চল্লিশের প্রতিমা অধিকারী সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের চৈতন্যপুর অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে সহায়িকা পদে নিয়োগ পত্র পেয়েছেন। তাঁর কাঠা ছ’য়েক জমি রয়েছে। স্বামী বিশ্বনাথ অধিকারী চাষের কাজ করেন, সেইসঙ্গে পুজোও করেন। বহু চেষ্টা চরিত্রের পর অঙ্গনওয়াড়ির নিয়োগ পেয়েও কাজে যোগ দিতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন প্রতিমা দেবী-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE