প্রচণ্ড গরমে ফুটিফাটা হয়ে যায় জমি। সেচের অভাবে ব্যাহত হয় চাষের কাজ। অনেক সময় চারা রোপণ পর্যন্ত করা যায় না। পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে কৃষিজমির পরিমাণ প্রায় ৭ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধে রয়েছে মাত্র প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, অর্ধেকেরও বেশি কৃষিজমিতে সেচের সুবিধে নেই। সমস্যা মেটাতে জেলায় আরও ৫২৪টি সেচ প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হল প্রশাসন। এর ফলে প্রায় ১৩,৩৮৫ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মূলত খরা প্রবণ এলাকায় এই প্রকল্পগুলো হবে। তা রূপায়ণে ব্যয় হবে প্রায় ১৬৬ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে রাজ্যের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনও মিলেছে। জেলায় যে সেচের সমস্যা রয়েছে, তা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, “সর্বত্র সেচের সুবিধে নেই। তবে জেলার বেশির ভাগ কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ৫২৪টি সেচ প্রকল্পের অনুমোদনও মিলেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” তাঁর কথায়, “প্রকল্পগুলো রূপায়িত হলে বহু কৃষক উপকৃত হবেন।”
জেলায় মোট ২৯টি ব্লক। তার মধ্যে জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে ১১টি ব্লক। সেখানেও সেচের এক সমস্যা। জেলার জঙ্গলমহলে কৃষিজমি রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধে রয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ১২ হাজার হেক্টরে। শুধুমাত্র সেচের জলের অভাবেই এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে জেলায় খরিফ চাষ হয়েছে। সব্জি চাষও মার খেয়েছে। সব্জি চাষ সেচ নির্ভর। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল জমা হয় জলাশয়-পুকুরে। সেখান থেকে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করেন কৃষকেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, খড়্গপুর-২, লালগড়, গোয়ালতোড়, দাসপুর, গড়বেতা সহ ১০-১২টি ব্লকে ফি বছর পর্যাপ্ত সব্জি চাষ হয়। ফি বছর ৪০-৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নানা প্রকার শীতকালীন সব্জি চাষ হয়। এ বছর সেচের অভাবে সব্জি চাষে সমস্যা হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে জলদি জাতের সব্জি চাষ হয়েছে নামমাত্র। অন্য দিকে, সেচের অভাবে জমিতে পোকামাকড়ের উপদ্রবও দেখা দেয়। ফলে, চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খড়্গপুরের অজিত মণ্ডল, ডেবরার কানাই মাইতি প্রমুখ কৃষকের মতে, “অনেক সময়ই সেচের জল মেলে না। সময় মতো সেচের জল না মিললে চাষের কাজে তো সমস্যা হবেই।”
সম্প্রতি যে ৫২৪টি সেচ প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে, তার মধ্যে ১৯০টি গুচ্ছ মিনি, ৯১টি গভীর নলকূপ, ১২০টি আরএলআই, ৭২টি পুকুর-চেক ড্যাম। মাটির নীচের জলস্তর কমছে। ফলে, বৃষ্টির জল ধরে রাখার প্রকল্প রূপায়ণে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার। জেলার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। তা-ও বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের জল পৌঁছয় না। জেলা পরিষদের এক কর্তার কথায়, “এই জেলাতেও মাটির নীচের জলস্তর কমছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহল এলাকায় এই সমস্যা আরও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। কারণ, এটা অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা।” তাঁর কথায়, “এখন থেকে সতর্ক না হলে পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা আরও বড় হয়ে দেখা দেবে। তাই আমরা বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপরই এখন গুরুত্ব দিচ্ছি। বৃষ্টির জল ধরে রাখতে ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য পুকুর-চেক ড্যাম প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। ওখানে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি খাল আছে। ফলে, প্রকল্প রূপায়ণ করাও সহজ।” জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু বলেন, “আমরা জেলার বেশির ভাগ কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনার সব রকম চেষ্টা করছি। এই ৫২৪টি সেচ প্রকল্প রূপায়িত হলেও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। এ নিয়ে স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy