Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কেশপুর

খুনে অভিযুক্ত সুশান্ত-সহ সিপিএমের ২৬

দলের জেলা পরিষদ সদস্যা কাকলি বরদোলুই খুনের ঘটনায় গোড়া থেকেই সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছিল তৃণমূল। কেশপুরের ওই ঘটনায় এ বার ২৬ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে খুনের মামলা রুজু হল। অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার বিধায়ক সুশান্ত ঘোষেরও! মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে খুন হন কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের লোয়াদা গ্রামের বাসিন্দা কাকলিদেবী। কাকলিদেবীর স্বামী বিশ্বজিৎ বরদোলুই তৃণমূলের জগন্নাথপুর অঞ্চল সভাপতি। তাঁর সামনেই গুলি করে মারা হয় বছর আঠাশের কাকলিদেবীকে।

এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎ বরদোলুই।—নিজস্ব চিত্র।

এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎ বরদোলুই।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২০
Share: Save:

দলের জেলা পরিষদ সদস্যা কাকলি বরদোলুই খুনের ঘটনায় গোড়া থেকেই সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছিল তৃণমূল। কেশপুরের ওই ঘটনায় এ বার ২৬ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে খুনের মামলা রুজু হল। অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার বিধায়ক সুশান্ত ঘোষেরও!

মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে খুন হন কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের লোয়াদা গ্রামের বাসিন্দা কাকলিদেবী। কাকলিদেবীর স্বামী বিশ্বজিৎ বরদোলুই তৃণমূলের জগন্নাথপুর অঞ্চল সভাপতি। তাঁর সামনেই গুলি করে মারা হয় বছর আঠাশের কাকলিদেবীকে। ঘটনার পরেই জ্ঞান হারান বিশ্বজিৎবাবু। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। বুধবার রাতে তাঁর বড়দা হরেন বরদোলুই আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে তিনি দাবি করেছেন, ‘গোটা ঘটনা আমরা জানলা দিয়ে দেখি। শুনি দুষ্কৃতীরা বলছে, সুশান্ত ঘোষের নির্দেশেই তোদের শায়েস্তা করতে এসেছি।’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও অভিযোগ, “সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই কাকলিকে খুন করেছে।”

এর আগে দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলায় সুশান্তবাবুর নাম জড়িয়েছিল। সিআইডি-র হাতে গ্রেফতারও হন তিনি। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে ছাড়া পেলেও মেদিনীপুর আদালতে বিচারাধীন এই মামলার শুনানির দিন ছাড়া এখনও পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকতে পারেন না সুশান্তবাবু। কাকলিদেবী খুনে অভিযুক্ত বাকি ২৫ জনের মধ্যেও অনেকে দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া। এঁদের মধ্যে আছেন সিপিএমের কেশপুর জোনাল সদস্য এন্তাজ আলি, নিয়ামত হোসেন প্রমুখ।

এই পরিস্থিতিতে মিথ্যা মামলার অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “পুরো অভিযোগটাই সাজানো।” বৃহস্পতিবার কলকাতায় ছিলেন সুশান্তবাবু। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “মানুষ সব দেখছেন। এ ব্যাপারে দলই যা বলার বলবে।” সুশান্ত-ঘনিষ্ঠ এক সিপিএম নেতার কথায়, “যে মানুষ গত সাড়ে তিন বছরে শুধু লোকসভা ভোটের দিন দু’ঘণ্টার জন্য গড়বেতায় ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তাঁর নামে এমন অভিযোগ প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়।” জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

খুনের তদন্তে নেমে পুলিশের ধারণা ছিল, আততায়ীরা হয়তো কাকলি নয়, তাঁর স্বামীকে মারতে এসেছিল। বিশ্বজিৎবাবু নিজেও এ দিন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলেন, “ওকে (কাকলি) মারতে আসেনি। টার্গেট ছিলাম আমি।” পাশাপাশি, লিখিত অভিযোগে কাকলিদেবীর ভাসুর হরেনবাবুও জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা লাঠি-টাঙ্গি-বন্দুক নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে বিশ্বজিৎবাবুর নাম ধরে ডাকছিল। বিশ্বজিৎবাবু ও কাকলিদেবী বাড়ির পিছনের দিক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখনই দুষ্কৃতীর ছোড়া গুলি কাকলিদেবীর পিঠে লাগে। ঘটনার পরে বিশ্বজিৎবাবুর মেজদা রঞ্জিতবাবু দাবি করেছিলেন, ঠিকাদারি ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত এবং রাজনৈতিক যোগাযোগের ফলে বিশ্বজিতের সঙ্গে অনেকের ‘শত্রুতা’ ছিল। ব্যবসায়িক কারণে তাঁকে দুষ্কৃতীরা মারতে এসেছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছিল।

আপনাকে কারা মারতে চাইছে? বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, “লোকসভা ভোটের আগেই কেশপুরে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। তার পরেই আমার উপর একবার হামলা হয়। সিপিএম রয়েছে এর পিছনে।” কিন্তু, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা শোনা যাচ্ছে যে? খানিক চুপ থেকে বিশ্বজিৎবাবুর জবাব, “কিছু লোক (দলের) হিংসা করত। কিন্তু, ওরা খুন করবে না। সিপিএমই করেছে! কেশপুরে এখন আমি আর সঞ্জয় পান (তৃণমূলের ব্লক সভাপতি) দলকে সংগঠিত করার কাজ করছি। আমাকে সরিয়ে দিলে সিপিএমের লাভ।”

সিপিএমের স্থানীয় বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই অবশ্য বলছেন, “কেশপুরে আমাদের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। এই অবস্থায় এমন অভিযোগ শুধু মিথ্যা নয়, হাস্যকরও। মানুষ বিশ্বাস করবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

keshpur murder tmc cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE