Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘটেই দেবী আরাধনা ঝাড়গ্রামের সারদাপীঠে

দেবীর অধিষ্ঠান তামার ঘটে। কার্তিক মাসের অমাবস্যার মহানিশায় সেই ঘটস্থাপন করে পুজো করেন সন্ন্যাসিনীরা। জলপূর্ণ তামার ঘটের ভিতর দেওয়া হয় মুক্তো, সোনা, রুপো ও তামার মতো নানা রত্ন ও ধাতু। ঘটে থাকে আম, বট, অশ্বত্থ, কাঁঠাল ও বকুলের পঞ্চপল্লব। তার উপর থাকে ডাব। এই ঘটেই দক্ষিণা কালীকে আহ্বান জানিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরে ষোড়শোপচারে পুজো করা হয়।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৩
Share: Save:

দেবীর অধিষ্ঠান তামার ঘটে। কার্তিক মাসের অমাবস্যার মহানিশায় সেই ঘটস্থাপন করে পুজো করেন সন্ন্যাসিনীরা। জলপূর্ণ তামার ঘটের ভিতর দেওয়া হয় মুক্তো, সোনা, রুপো ও তামার মতো নানা রত্ন ও ধাতু। ঘটে থাকে আম, বট, অশ্বত্থ, কাঁঠাল ও বকুলের পঞ্চপল্লব। তার উপর থাকে ডাব। এই ঘটেই দক্ষিণা কালীকে আহ্বান জানিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরে ষোড়শোপচারে পুজো করা হয়। ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের ঐতিহ্যপ্রাচীন কালীপুজোয় এমনই রীতি। তন্ত্রোক্ত মতে পুজো হলেও পশুবলি হয় না। পরিবর্তে কলা বলি দেওয়া হয়। তবে ঘটেশ্বরী দক্ষিণা কালিকার উদ্দেশে অন্নভোগের সঙ্গে নিবেদন করা হয় পঞ্চব্যঞ্জন আর মাছ ও মাংসের রকমারি পদ।

সময়টা ১৯৪৮ সাল। জঙ্গলমহলে নারী শিক্ষার প্রসারে ঝাড়গ্রামে আসেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী শর্বানন্দ। অরণ্যশহরের জঙ্গল লাগোয়া একপ্রান্তে তিনি গড়ে তোলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুল। ১৯৫০ সালে তাঁরই উদ্যোগে এখানে তামার ঘটে কালী পুজোর সূচনা হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি নিজেই পুজো করতেন। কিন্তু স্বামী শর্বানন্দ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৯৬২ সাল থেকে কন্যাগুরুকুলের সন্ন্যাসিনীরাই পুজোয় তন্ত্রধারক ও পুরোহিতের দায়িত্ব পান। কন্যাগুরুকুলের সহ সম্পাদিকা তথা পুজোর তন্ত্রধারক পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া জানালেন, এবার ৬৫ তম বর্ষের কালীপুজোয় সেই একই নিয়ম মেনে আচার অনুষ্ঠান হবে।

কালীপুজোর সকালে কন্যাগুরুকুলের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মন্দিরে চলবে চণ্ডীপাঠ। নাটমন্দিরে ঘট-পুজো শুরু হবে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার তিথি মেনে মহানিশায়। ফল-মিষ্টি নৈবেদ্যের পাশাপাশি, দেবীকে নিবেদন করা হয় অন্নভোগ, লুচি, নানা ব্যঞ্জন, মাছ ও মাংসের বিভিন্ন পদ। ষোড়শোপচারে পুজো শেষে দক্ষিণা কালীর হোমের পূর্ণাহতির পর ঘট নাড়িয়ে হয় বিসর্জন ক্রিয়া। আত্মহৃদয়া বলেন, “সূর্য ওঠার আগেই বিসর্জন ক্রিয়া শেষ করা হয়। কালিপুজোর পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দুপুরে অন্ন ও মাছ-মাংসের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সাড়ে ছয় দশক আগে বাবা (স্বামী শর্বানন্দ) মাতৃশক্তি জাগরণের ভাবনা থেকেই সারদা মায়ের ছবিতে শারদীয়া দুর্গা পুজো ও তামার ঘটে দীপান্বিতা কালীপুজো শুরু করেন। সেই থেকে প্রতি বছর নিয়ম নিষ্ঠাভরে পুজোর আয়োজন করা হয়। সাড়ে ছয় দশক ধরে জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী মেয়েদের মনে জ্ঞানের আলোক শিখা জ্বালিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে।” সংস্থার স্বশাসিত তিনটি স্কুলে শিক্ষাদানের পাশাপাশি, নানা ধরনের সমাজসেবা মূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সন্ন্যাসিনীরা।

জ্ঞান ও শক্তির প্রার্থনার-পুজোটি দীপান্বিতার মতোই আলোকময়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kingshuk gupta jhargram kalipujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE